মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিরোধের জেরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার মুরাদনগরের পালাসুতা গ্রামে বেড়াতে এলে জামাতা ইসমাইল ও তার বন্ধু নূরু মিয়াকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনিতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন জামাতার আরেক বন্ধু। এই হত্যার ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে এখনো মামলা হয়নি। অপরদিকে নিহত দুই যুবকের পরিবারের দাবি, তারা ডাকাত নয়, পরিকল্পিতভাবে তাদের গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। নিহত নূরু মিয়া (২৮) মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের আবদুস ছালামের ছেলে ও বন্ধু ইসমাইল হোসেন (২৭) একই উপজেলার পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। অপর বন্ধু আহত শাহজাহান (২৮) সদর দক্ষিণ থানার বাগমারা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে। তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানায়, শুক্রবার রাতে বোড়ারচর গ্রামে ডাকাতি করতে এসে ধাওয়া খেয়ে ডাকাত দলের তিন সদস্য পালাসুতা গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে এমন খবর এলাকার মাইকে ঘোষণা করা হয়। এতে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে ডাকাত সন্দেহে নাবু মিয়ার ঘর থেকে তার মেয়ের স্বামী ও দুই বন্ধুকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে ঘর থেকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। গণপিটুনিতে আহত শাহজাহান বলেন, ‘ঘটনার দিন পালাসুতা গ্রামে অনুষ্ঠিত মাহফিল, নূরুর অসুস্থ বাবাকে দেখা ও নূরুর শ্বশুরবাড়িতে থাকা ছেলেকে দেখতে আমরা পালাসুতা গ্রামে যাই। রাত ১০টার দিকে পালাসুতা গ্রামে নূরুর শ্বশুরের বাড়িতে যাই এবং ঘরে বসে সবার সঙ্গে কথা বলছিলাম। ঠিক তখনই কিছু লোক এসে আমাদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে মারতে থাকে।’ নিহত নূরু মিয়ার মা জাহানারা বেগম ও স্ত্রীর বোন রফিয়া অভিযোগ করেন, নূরু কুমিল্লায় পরিবার নিয়ে থাকেন। শুক্রবার রাতে সে ও তার দুই বন্ধু মাহফিলের কারণে রাত ৯টার দিকে গ্রামের নিজ বাড়িতে আসে। মার সঙ্গে দেখা করে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। নূরু খারাপ কোনো কাজে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে এর আগে পুলিশি কোনো অভিযোগও নেই। তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ইসমাইলের স্ত্রী তানিয়া ও মা মিনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, আমাদের পরিবারের সঙ্গে ইসমাইলের চাচার সিরাজুল ইসলাম শেখের জমিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ ছিল। আর আমাদের বাড়ির প্রতিবেশী আলাউদ্দিন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। আমাদের জন্য তাদের মাদক বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল। এই ঘটনার পূর্ব থেকে সিরাজুল ইসলাম শেখ, তার ছেলে এবং আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী উপস্থিত থেকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, মানুষের মুখে ডাকাত আটক করা হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু তাদেরকে হত্যায় আমি ও আমার ছেলে জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা। এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। শিগগিরই ভিকটিমের পরিবার থানায় এসে মামলা করবে।

সর্বশেষ খবর