রাজধানীর বেসরকারি বাজারগুলোকে শৃঙ্খলার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে বাজার শৃঙ্খলায় আনতে বিধিমালা তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ। সংস্থাটি বিধিমালাও প্রকাশ করেছে। বিধিমালায় বেসরকারি বাজারগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার শৃঙ্খলায় আনতে সাত সদস্যের কমিটি রাখা হবে। লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। এই লাইসেন্স সব বেসরকারি বাজারের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর বেসরকারি বাজার বিধিমালা তৈরি করছে। শিগগিরই এই বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বাজার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা বিধিমালাটি গত বছর ২২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে। পরে ১২ জানুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি বাজারের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রতিটি লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে এক বছর। এক বছর পর তা নবায়ন করতে হবে। কোনো মালিক শর্ত ভঙ্গ করলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। বেসরকারি বাজার পরিচালনার জন্য সাত সদস্যের কমিটি থাকবে। এই কমিটি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং, রক্ষণাবেক্ষণ ও করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবে। একই সঙ্গে করপোরেশনের নয় সদস্যের বেসরকারি বাজার কমিটি থাকবে, যেখানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ করপোরেশনের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকবেন। এই কমিটি তদারকসহ বাজার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এ ছাড়া রাস্তা দখল করে যত্রতত্র বাজার বসানো যাবে না। বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতামুক্ত রাখাসহ ১৯ শর্ত মানতে হবে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে।
১৯ শর্তে যা থাকছে : বাজারের সঙ্গে কমপক্ষে ৬.১০ মিটার এবং বাজারের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য ১.৫২ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। বাজারে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পৃথক শৌচাগার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রধান সড়কের পাশে বাজার হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ২১৫ টাকা এবং অন্যান্য পর্যায়ের সড়কের পাশে অবস্থিত হলে ১০৮ টাকা অবকাঠামোর মালিককে প্রতিবছর জমা দিয়ে বাজার পরিচালনার লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। আর যে মালিক বাজারের লাইসেন্স না নিয়ে বাজার পরিচালনা করবেন তার বিরুদ্ধে পাঁচ শতাংশ হারে মাসিক জরিমানা ধার্য করা হবে। করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে বাজার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। তবে রাস্তা ও রেললাইনের পাশ দখল করে বাজার নির্মাণ করা যাবে না। এ ছাড়া বাজারে নির্ধারিত সীমানার বাইরে রাস্তায় পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। বাজারে বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনোভাবে বাজারের পয়োবর্জ্যরে সংযোগ সিটি করপোরেশনের খাল, নালা বা নর্দমায় যুক্ত করা যাবে না। আর বাজারে অবৈধ, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি এবং কোনো ধরনের বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বাজার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ক প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হবে। ব্যবস্থাপনা কমিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারের আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণ নিশ্চিত করবে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বেসরকারি বাজারগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে প্রবিধানমালা তৈরি করছে। এ প্রবিধানমালায় রাস্তা দখল করে যত্রতত্র বাজার, মানুষের চলার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন জায়গায় দোকান বসানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধসহ নানা নিয়ম থাকছে। শিগগিরই এই বিধিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কাঁচাবাজার স্থাপনের যে পরিকল্পনা, সে আলোকে কাজ চলছে। ওয়ার্ডভিত্তিক বাজার স্থাপনে সম্ভাব্য যাচাই চলছে। আর যেসব ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে মালিকানাধীন বাজার ব্যবস্থাপনা রয়েছে, সেগুলো ডিএসসিসি থেকে অনুমোদন, অর্থাৎ লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, যেসব ওয়ার্ডে নতুন করে বাজার হবে সেখানে প্রবিধানমালা অনুযায়ী রাস্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণসহ সব নিয়ম মানা হবে। আর যেখানে বাজার রয়েছে, সেখানেও এসব নিয়ম মানতে হবে। যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।