বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাপাড়ায় রাজা তৃতীয় চার্লস

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

১৯৭৮ থেকে ২০২৩। মাঝখানে ৪৫ বছরের সংগ্রাম, অভিযাত্রার গল্প। ৪৫ বছর আগে যেখানে রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছিল ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের বঞ্চনার ইতিহাস, সেই একই জায়গায় ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রতি সম্মান জানাতে উপস্থিত হয়েছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস! সঙ্গে রানি ক্যামিলা। এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকার মতো একটি দিন। এ গৌরবের কাজটি করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি দম্পতি কাউন্সিলর আবদাল উল্লাহ ও আয়েশা কুরাইশি ওবিই। তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপায়ারেশন-বিবিপিআইয়ের দাওয়াতে এসেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। আগের এক সপ্তাহজুড়ে ছিল নানা প্রস্তুতি। আলতাব আলী পার্ক সুসজ্জিত করা, ব্রিকলেনের যাত্রাপথ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি। ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার বেলা ১১টায় রাজা আসেন আলতাব আলী পার্কে। এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সব আমন্ত্রিত অতিথি মাঠে প্রবেশ করেন। রাজা তৃতীয় চার্লসকে আমন্ত্রণ জানান টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকার শাফি আহমদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী মেয়র লুতফর রহমান, আবদাল উল্লাহ ও আয়েশা কুরাইশি ওবিই। এরপর আয়েশা কুরাইশি ওবিই ও আবদাল উল্লাহ রাজা-রানিকে নিয়ে হেঁটে যান শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। এ সময় টাওয়ার হ্যামলেটসের স্কুল শিক্ষার্থীরা পার্কের রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানায়।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক নবাব উদ্দিন এবং উপস্থাপিকা ও আবৃত্তিশিল্পী ঊর্মি মাজহার। এরা দুজনই শহীদ মিনার ও ভাষা আন্দোলন এবং ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের উত্থানের গল্প বলেন। সেখান থেকে রাজা ও রানিকে নিয়ে আবদাল উল্লাহ ও আয়েশা কুরাইশি ওবিই যান শহীদ মিনারের বেদির কাছে। সেখানে রাজনীতিবিদ হেলাল আব্বাস, সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহসহ ১৯৭৮ সালের আন্দোলনকারীরা সে সময়কার বর্ণবাদ হামলা ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার, চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার ড. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার- তারা তিনজনই ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি মিডিয়ার উত্থান ও গৌরবের কথা বলেন। এর পরই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন রাজা।

মাঠের ভেতর ১৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। এর বাইরে রাস্তা ও পার্কের দুই পাশে ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পার্ক থেকে গাড়িতে করে রাজা, রানি, আবদাল উল্লাহ ও আয়েশা কুরাইশি ওবিই একসঙ্গে যান ব্রিকলেনের মুখে বাংলা টাউন গেটের সামনে। সেখানে তাদের স্বাগত জানান ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রধান সাঈদা মুনা তাসনিম। এ সময় চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ আলী তার মাটির টানে ম্যুরাল দেখান রাজা ও রানিকে। এরপর রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে রাজা, রানি, আবদাল উল্লাহ, আয়েশা কুরাইশি ওবিই হাঁটতে থাকেন ব্রিকলেনের ভেতরে। ব্রিকলেনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেলিব্রেটি শেফ আতিকের হাতে বানানো পিঠা খান রাজা। সেখান থেকে রাজা ও রানি সরাসরি ঢুকে যান ব্রিকলেন মসজিদে। ব্রিকলেন মসজিদ কমিটি ছাড়াও ব্রিকলেনের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন রাজা ও রানি। মসজিদের ভেতরে ব্রিকলেন ফিউনারেলের কার্যক্রম দেখেন রাজা। তিনি কভিডের সময় তাদের অসামান্য সাপোর্ট ও কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। ঐতিহাসিক সফর শেষ করে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে রাজা ও রানি বিদায় নেন বাংলাপাড়া থেকে।

 

সর্বশেষ খবর