সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য সুবিধা শর্তের বেড়াজালে

শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন মানতে হবে বাংলাদেশকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য সুবিধা শর্তের বেড়াজালে

যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য সুবিধা নিতে গেলে মোটা দাগে পাঁচটি শর্ত মানতে হবে বাংলাদেশকে। এ পাঁচটি শর্ত হচ্ছে : শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা। দেশটি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এ শর্তগুলো মানতে আন্তর্জাতিক যেসব রীতিনীতি (কনভেনশন) আছে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। বাংলাদেশের আইন ও বিধিতেও এর উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ছাড়াও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্কবৈষম্য নিরসন করে দেশি-বিদেশি কোম্পানির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। 

গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপে বিভিন্ন শর্ত ও সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো অনুসরণ ও সমাধানে জোর

দেয় যুক্তরাজ্য। রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে ব্রিটিশ হাইকিমশনার রবার্ট চ্যাটারসন ডিকশন ও দেশটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বাণিজ্য কমিশনার এলান জিমেল ওবে নেতৃত্ব দেন। সংলাপের পর দুই পক্ষের আলোচনা নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়।

দ্বিপক্ষীয় এ সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার। দেশটিতে রপ্তানি সুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) নামের যে নতুন বাণিজ্যনীতি ঘোষণা করেছে, সে স্কিমের আওতায়, অস্ত্র ছাড়া অন্য সব পণ্যে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের (২০২৬ সালে উত্তরণ ও পরবর্তী তিন বছর প্রস্তুতিকালীন সময়সহ ২০২৯ সাল পর্যন্ত) পরও বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস-এর অনুকরণে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আমরা বাংলাদেশে তাদের আরও বেশি বিনিয়োগ চেয়েছি। তারা বিদেশি বিনিয়োগে কিছু বাধার কথা তুলে ধরে সেগুলো সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতি বছর এ ধরনের সংলাপ অনুষ্ঠান এবং দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়ে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।

সূত্র জানান, দ্বিপক্ষীয় সংলাপের শুরুতে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের নতুন বাণিজ্য স্কিম (ডিসিটিএস)-কে স্বাগত জানায়। পাশাপাশি বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ আছে এবং এ বিষয়ে দেশটির বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ডিসিটিএসের আওতায় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নেবে, তাদের মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার রক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। কারণ গুরুতর মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বাণিজ্য সুবিধা তুলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখা হয়েছে এ স্কিমে। এ ছাড়া, দুর্নীতিবিরোধী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক কনভেনশনগুলোতে যুক্তরাজ্যের যে অঙ্গীকার আছে, তা ডিসিটিএস সমর্থন করবে বলেও সংলাপে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি। সংলাপে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পদ্ধতিগত অনিশ্চয়তা, চুক্তি বাস্তবায়নের শর্তাবলি, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি করহারের মতো বিষয়গুলো সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছে দেশটি। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য করপোরেট কর কম থাকলেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ করহার নিয়ে আপত্তি তুলে দেশটি জানিয়েছে, এ ধরনের করহার বিদেশি বিনিয়োগের অন্তরায়। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য সমস্যা নিষ্পন্ন করতে একটি বিকল্প বাণিজ্য বিরোধ প্লাটফরম তৈরি ও মেধাসম্পদ সুরক্ষার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে দেশটি। সেবা খাতে বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে যুক্তরাজ্য বলেছে, তার দেশ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ করতে চায়। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়েও দেশটি আগ্রহ দেখিয়েছে।

সর্বশেষ খবর