বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৌচাকের সঙ্গে মানুষের বসবাস

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

মৌচাকের সঙ্গে মানুষের বসবাস

প্রবাদ আছে মৌমাছিরা নাকি গ্রামের মানুষের ভালো-মন্দ বুঝে চাক বাঁধত। আর মৌমাছিরা যখন উড়ে যেত তখন গৃহস্থ বধূরা ঢেঁকিতে পাড় দিত। যাতে মৌমাছিরা ঢেঁকির শব্দ শুনে তাদের বাড়িতে চাক বাঁধে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্যি এমন উক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে নওগাঁর মান্দায় পরানপুর ইউনিয়নের পীরপালি ও ফেটগ্রাম নামের দুটি গ্রামে ঘরের দেওয়ালে, বারান্দায়, ছাদের কার্নিশে, ঘরের কক্ষগুলোতে, গাছের ডালসহ বাড়ির আনাচে-কানাচে মৌমাছির চাক। একেকটি বাড়িতে রয়েছে ৭০ থেকে ১০০টি করে মৌমাছির চাক। এতে ওই দুই গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা এসব মৌমাছির চাক। বর্তমানে এই দুটি গ্রাম মৌমাছির চাকের গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত। বছরের প্রায় ৬ মাস এমনভাবে মৌচাকের সঙ্গে বসবাস করেন তারা। তাদের কোনো অসুবিধা বা মৌমাছি কামড়ানোর ঘটনাও কোনোদিন ঘটেনি। একটি মৌচাক থেকে ৩-৫ কেজির অধিক মধু সংগ্রহ করা যায়। একটি মৌচাক থেকে একাধিকবার মধু সংগ্রহ করা যায়। এদিকে নিজের চোখে দেখে মৌমাছির চাক থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে। আর এটা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসেন। এতে এলাকার পরিবারগুলোর ভাগ্য ফিরেছে। পিরপালি গ্রামের মাস্টার হাফিজ উদ্দিন বলেন, প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে এই পরিবারগুলো এভাবেই চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে আসছে। সরিষা চাষের মৌসুমে এই মৌমাছিগুলো ফিরে এসে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মৌচাক তৈরি করে। আবার মৌসুম শেষে তারা কোথায় চলে যায় তা বলা মুশকিল। রাজশাহী থেকে আসা রকিবুল হাসান বলেন, আমি শুনেছি কিন্তু মৌমাছি আর মানুষের এক সঙ্গে এমন বসবাস আগে কখনো দেখিনি। খুব অবাক করার মতো একটি বিষয়। খুবই ভালো লেগেছে। আর প্রাকৃতিকভাবে আহরিত এই মধু সত্যিই খুব সুস্বাদু। যে কেউ চোখ বন্ধ করে এই মধু সংগ্রহ করতে পারেন। আমি গ্রামবাসীদের কাছে জেনেছি গত ২৫-৩০ বছর ধরে তারা এই মৌচাকগুলো দেখে আসছেন। বছরের প্রায় ৬ মাস এমনভাবে মৌচাকের সঙ্গে জীবন-যাপন করেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, চলতি সরিষা মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এই মধু সংগ্রহ করতে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মৌ বাক্স প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাহির থেকে মৌয়ালদের নওগাঁয় এসে মধু সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যার কারণে এই মধু সংগ্রহ করতে নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে অনেক বেকারদের। সৃষ্টিকর্তার এমন মহিমায় এক দিকে যেমন এই মৌচাকগুলো ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক অপর দিকে সংগ্রহকৃত মধু বিক্রি করে ফিরেছে গ্রামবাসীর ভাগ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর