শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিপজ্জনক পথে বিদেশযাত্রা

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন হত্যা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

উন্নত জীবনের আশায় নুর আলমের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানোর। তার সেই স্বপ্ন পূরণে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে একটি দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু টাকা নিয়ে দালালরা ইতালির বদলে তাকে লিবিয়ায় নিয়ে একটি বাসায় আটকিয়ে রেখে নির্যাতন চালিয়ে দেশে থাকা তার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে লিবিয়ার একটি মর্গে পড়ে আছে তার নিথর দেহ। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার মরিয়া হয়ে তদবির করেও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তার অসহায় পরিবার। নুর আলম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আবদুল হালিম মোল্যার ছেলে। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। নুর আলমের বড় ভাই মো. সিরাজ মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই নুর আলমকে ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায় দালাল চক্রের সদস্য পার্শ্ববর্তী বাখারদিয়া গ্রামের মোকছেম মোল্যার ছেলে মোফিজ মোল্যা। তার সঙ্গে দালাল চক্রের সদস্য একই গ্রামের সিরাজ মুন্সীর ছেলে লিটন মুন্সী, মাঝারদিয়া গ্রামের আনারদ্দী মোল্যার ছেলে তোরাপ মোল্যা ও নগরকান্দার ধরনদী গ্রামের খোরশেদ মোল্যার ছেলে মিজান মোল্যা রয়েছে। এরা সবাই লিবিয়ায় থাকে। তিনি আরও বলেন, এক বছর দুই মাস আগে ইতালি নেওয়ার জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন নুর। চক্রের হোতা মোফিজ নুরকে দেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে ৪ লাখ আর ইতালি পৌঁছে ৪ লাখ টাকা দিতে বলে। তার কথামতো প্রথমে তাকে ৪ লাখ টাকা দেন নুর। পরে নুরকে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। তাকে নিয়ে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজিতে একটি বাসায় রাখা হয়। ওখান থেকে নৌপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি না নিয়ে লিবিয়ায় একটি বাসায় দিনের পর দিন আটকে রেখে দালালরা নির্মম নির্যাতন চালায়, আর দেশে থাকা পরিবারের কাছে ফোন করে দফায় দফায় টাকা পাঠাতে বলে। নুরকে বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে দালালরা যখন যে টাকা চেয়েছে, আমরা তাই পাঠিয়েছি। মোট ২২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একপর্যায় নুর দেশে ফেরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নুর দেশে এসে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে প্রথমে বাধা দেওয়া হয়। পরে নুরকে আবারও মারধর এবং নির্যাতন শুরু করে দালালরা। নুর বারবার ফোনে ওদের নির্যাতনের কথা জানিয়ে বলেছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে, তোমরা আমাকে বাঁচাও। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে হত্যা করে বাসায় ঝুলিয়ে রাখে।

১৩ ফেব্রুয়ারি ওই দালালরা আমাদের ফোন করে বলে নুর আত্মহত্যা করেছে। নুর আলমের ছেলে রাসু মোল্যা ও মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, টাকা দিতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের অল্প জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে ও ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা ওই দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি। সেই সঙ্গে বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, নুর আলমের ঘটনাটি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের সহযোগিতা লিখিতভাবে চায়, তাহলে আইন মোতাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর