সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রপ্তানি আয় বাড়লেও কমেছে পরিমাণ

শাহেদ আলী ইরশাদ

রপ্তানি আয় বাড়লেও কমেছে পরিমাণ

চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয় বাড়লেও কমে গেছে পরিমাণের হিসাবে। রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ঝুঁকিতে পড়বে কর্মসংস্থান।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩০ লাখ ১৫ হাজার টন পণ্য। আগের বছর ২০২১ সালের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ ২৩ হাজার টন পণ্য। এক বছরের ব্যবধানে পণ্য রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি। তবে পরের বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পরিমাণে রপ্তানি কমলেও আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে  আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির বিপরীতে ৪৪ লাখ ১০ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৫৬ লাখ ৮১ হাজার টন। ২০২০ সালে কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৮ লাখ টন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং ডলারে দর বৃদ্ধির কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাঁচামাল আমদানি কমেছে। রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরির জন্য বেশির ভাগ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। একটি ওভেন পোশাক তৈরি করতে ৬৫ ভাগ কাঁচামালই আনতে হয় বিদেশ থেকে; যা আসে সরকারের বন্ডব্যবস্থার আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূল্য সংযোগ এখন বাড়ছে। দুই বছর ধরে দেশি সুতা, কাপড় ও কাঁচামালের ব্যবহার আগের তুলনায় বেড়েছে; যার কারণে বন্ডের আওতায় আমদানির পরিমাণ কমছে। তবে শুধু স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতাই যে আমদানি কমায়নি, তা স্পষ্ট হয় রপ্তানি পণ্যের পরিমাণগত হিসাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ কমে গেছে, এটা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। আয় যতই বাড়ুক যদি পণ্যের পরিমাণ না বাড়ে, তাহলে সেটা আমাদের কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলবে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দেখলে হবে না, কর্মসংস্থানও দেখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোশাকের দাম যেটুকু বেড়েছে সেটা কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে। এতে আমাদের কোনো লাভ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এটা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি নয়, এটা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, আগে ১০ লাখ টন ফেব্রিকসের টি-শার্ট রপ্তানি করে ২০ লাখ ডলার আয় হতো। এখন ৮ লাখ টন ফেব্রিকসের টি-শার্ট রপ্তানি করে ২৫ লাখ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। কারণ ফেব্রিকসের দাম বেড়েছে। কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যার কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে। মোট কথা ইউনিট প্রাইসটা বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, এমনটা মূলত বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে। কাঁচামালের দাম ও সাপ্লাইচেন খরচ বাড়ার ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি আয়ও বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ কমে গেছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ আমাদের পণ্যের সংখ্যা যদি কমতে থাকে সেটা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত সাপ্লাইচেন শিল্প ফেল করবে। সেটার পতন হলে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। রপ্তানি আয় বাড়ার পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়েছে পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে। দুই বছরের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৭৮ ভাগের মতো। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৬ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৯২ হাজার ৪৮৬ কোটি ডলার। আর ২০২০ সালে ৫৩ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর