সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা, দুদককে তদন্তের নির্দেশ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের অর্থ সম্পদ ও সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক মহাপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) সেগুন বাগিচা ঢাকাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত বুধবার পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম এনামুল করিমের আদালত এ নির্দেশ  প্রদান করেন। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, পৌরশহরের লঞ্চঘাট সড়কের মো. আবদুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপি, বর্তমান ও তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, তার স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, সাব-রেজিস্ট্রারসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২ নম্বর আসামি কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন এবং ১ নম্বর আসামি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বরাদ্দ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩০ হাজার টাকা মসজিদের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করেন। ওই টাকা মসজিদের অনুকূলে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/নগদ টাকা) কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ নম্বর আসামির নির্বাচনী এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী-৪ সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দ ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা, খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের অসমাপ্ত অংশ সমাপ্তকরণ ও মাঠ ফন্টাট সলিং প্রকল্পের নামে ১ ও ২ নম্বর আসামি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে কোনোরূপ কাজ না করে এবং মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় সংসদ সদস্যের অনুকূলে ২০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের মধ্য থেকে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ ও সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা ছিল। বরাদ্দ করা ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ১ নম্বর ও ২ নম্বর আসামি অন্য আসামিদের সহায়তায় মসজিদ অনুকূলে বিক্রীত অর্থ বা খাদ্যশস্য জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ১ ও ২ নম্বর আসামি গ্রহণ করে অন্য আসামিদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। পটুয়াখালী জেলা পরিষদ থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের আবাসস্থল ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা মসজিদ কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মীর আবদুল বারেককে উত্তোলন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে ১ ও ২ নম্বর আসামি অন্য আসামিদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। এসব সরকারি অনুদানের স্মারক নম্বর, চেক নম্বর ও গ্রহণের তারিখ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২-এর ৫৬ (১) ধারা মোতাবেক মসজিদের কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে ওয়াকফের অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে ১১টি ছাপকবলা দলিলের মাধ্যমে ১ থেকে ৫ নম্বর আসামি পরস্পর যোগসাজশে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় উল্লিখিত এ অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সাবেক মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণ ও সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। ইউএনও কমিটির সভাপতি তাই মিটিং করে তার অনুমোদন নিয়ে সব কিছু করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে পটুয়াখালী-৪ কলাপাড়া আসনের সাবেক এমপি, সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর