শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেডিকেল ভর্তি ও প্রশ্ন ফাঁসে অতিরিক্ত সচিবের নাম : ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম বেচাকেনা দিয়ে হাতেখড়ি। এক সময় পরিচয় হয় প্রশ্নফাঁস বাণিজ্যের অন্যতম গডফাদার পলাতক জাহিদের সঙ্গে। পরে সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে ফার্মগেটের কনসেপ্ট টাওয়ারে নিজেই খুলে বসেন ‘ফ্রেন্ডস এডমিশন কনসালটেন্ট’ নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। শুরু হয় দেশি এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীদের মেডিকেল কলেজে ভর্তি বাণিজ্যসহ প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়োগ প্রতারণা। তবে এস এম আনিস নামের এ প্রতারক এবার ধরা পড়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জালে। অবাক করা তথ্য হলো, এ সিন্ডিকেটে সদ্য সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের নাম উঠে এসেছে আনিসের জবানিতে। শুধু তাই নয়, আনিসের সঙ্গে সেই আমলার   কথোপকথনের অনেক প্রমাণও রয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের হাতে। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আনিসের নেতৃত্বাধীন এ চক্রে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কোচিং সেন্টারের কিছু লোকজনের নাম এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তিনি আরও বলেন, ডিবির কোতোয়ালি জোনাল টিম মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এস এম আনিসকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে ২০২৩ সালের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার অনেকগুলো অ্যাডমিট কার্ড, পূর্ববর্তী এমবিবিএস পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতার আনিস তার প্রতিষ্ঠানের (ফ্রেন্ডস এডমিশন কনসালটেন্ট) প্যাডে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের সিট সংরক্ষণের জন্য চিঠি লিখে অনুরোধ করত। এ কাজে ব্যবহার করা হতো ন আদ্যাক্ষরের ওই সাবেক অতিরিক্ত সচিবসহ আরও কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্টদের এবং ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আস্থায় নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করত আনিস। ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনিসের বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনের রেকর্ডও হাতে পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযুক্ত ওই অতিরিক্ত সচিব আনিসের সঙ্গে পরিচয়ের কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সূত্র আরও জানায়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি, প্রতারণা বাণিজ্য করে আনিস ইতোমধ্যে দুটি খাবার হোটেল এবং একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে।

যেভাবে প্রতারণায় : আনিসের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার মহেশপুর ইউনিয়নে। এইচএসসি পাসের পর কিছুদিন পিপলস জুট মিলে কাজ করেন তিনি। পরে বিভিন্ন কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে ডাইংয়ের কাজ করেছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আনিস ফার্মগেট এবং গ্রিন রোডে ছাত্রছাত্রী হোস্টেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফরম বেচাকেনা শুরু করেন। একপর্যায়ে পরিচিত হন নিজ এডুকেশন নামের কনসালটেন্সি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহিদের সঙ্গে। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে তিনি চক্রে সম্পৃক্ত করেন কিছু অসাধু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকেও। বুধবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রতারণার অভিযোগে মিরাজ হোসেন তুহিন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।

 

সর্বশেষ খবর