শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

দলিল জালিয়াতিতে পাঁচ বছর কারাদণ্ড

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া চূড়ান্ত

আকতারুজ্জামান

ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি খাসজমিসহ সরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ভূমির অবৈধ দখল, জালিয়াতি, প্রতারণা ঠেকাতে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ করছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনের এই খসড়া দফায় দফায় যাচাই-বাছাই, আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সভা শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই আইনে ভূমি দলিল জালিয়াতি বা ভূমি ব্যবস্থাপনার যে কোনো প্রতারণা বা জালিয়াতির দায়ে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মালিকানাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করলে দুই বছরের জেল, জমির সীমানার ক্ষতি করলে দুই বছরের দণ্ড ছাড়াও সরকারি জমি জলাশয়, নদী, হাওর দখলে দুই বছরের দণ্ডের ধারা সংযোজন করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে অর্থদে র বিধানও। বর্তমানে এই আইনের চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাছাই কমিটিতে রয়েছে। এ আইন পাস হলে দলিল ছাড়াই অবৈধভাবে ভূমি দখল বা তা বজায় রাখতে পেশীশক্তির ব্যবহার প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আইনের খসড়া থেকে দেখা গেছে, যদি কোনো ব্যক্তি ভূমি হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন, তথ্য সরবরাহ বা ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোনো কার্যক্রমে প্রতারণা বা জালিয়াতি করেন, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ অপরাধে জড়িত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ‘স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টিনাসি অ্যাক্ট ১৯৫০’ অনুযায়ী ভূমির মালিকানাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে আদালত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের আদেশ ছাড়া উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা যাবে না। তাকে ভূমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়াও যাবে না। কোনো ব্যক্তি এমন অপরাধ করলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাভোগ করতে হবে। আইন অনুযায়ী, ভূমির মালিকানাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করা হলে তিনি পুনর্বহালের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের তিন মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দখল পুনরুদ্ধার করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে এতে অসহযোগিতা বা গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দখল পুনরুদ্ধারে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

জমির সীমানার ক্ষতিসাধনের দায়ে দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বৈধ দখলীয় ভূমির সীমানা বা চিহ্নের ক্ষতিসাধন করলে বা এর কারণে স্থাপনা, গাছ, ফসল ইত্যাদির ক্ষতি হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

বায়নাপত্র, দলিল করার পর প্রতারণার শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে এ আইনে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, বিক্রির জন্য নির্ধারিত মূল্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করা সত্ত্বেও যদি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ক্রেতাকে ভূমির হস্তান্তর ও দখল দিতে ব্যর্থ হন তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি ১ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া জমি বিক্রির জন্য বায়নাপত্র বা দলিল করার পর তা কার্যকর থাকা অবস্থায় ঐ জমি অন্য কারো কাছে বিক্রির জন্য দলিল করলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে। একইসঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্রয়মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর কোনো বায়নাপত্র বাতিল হওয়ার পরও যদি বায়নাগ্রহীতা ঐ জমি দখল করেন বা দখলের চেষ্টা করেন বা অন্যত্র বিক্রিতে বাধা দেন তবে এজন্য আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি ১ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনে সরকারি জমি, নদী, হাওর, পুকুর, লেক, বিল ও অন্যান্য জলাভূমি দখলেও শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। আইনের খসড়া অনুযায়ী, সরকারি জমি বেআইনিভাবে কেউ দখল করলে বা দখলের চেষ্টা করলে এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে নদী, হাওর, পুকুর, লেক, বিল ও অন্যান্য জলাভূমি কেউ ভরাট করলে এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি কমপক্ষে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমান গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে নীতিগত অনুমোদন পেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে এটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। জানা গেছে, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধ সংঘটনে কেউ সহায়তা করলে এ অপরাধে সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তিও অপরাধী হিসেবে দণ্ডনীয় হবেন। এ ছাড়া অপরাধ করে এ আইনের আওতায় কেউ শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে ফের একই অপরাধে জড়ালে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ পরিমাণে দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর