মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যটকদের নজর কাড়ে সবুজের কাঠের ভাস্কর্য

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

পর্যটকদের নজর কাড়ে সবুজের কাঠের ভাস্কর্য

সবুজ তজু। বসবাস শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানের গাড়ো লাইনে। তিনি গামাইর গাছ, গাছের ডাল ও শিকড় দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করেন। বাগানে তিনি ভাস্কর্য সবুজ নামেই পরিচিত। তার তৈরি ভাস্কর্য দেখতে খুবই সুন্দর। তার ভাস্কর্য পর্যটকদের নজর কাড়ে।

কিন্তু টানাপোড়েনের মধ্যে সবুজ সংসারের ঘানি টানবেন না ভাস্কর্য বানাবেন। একেকটি ভাস্কর্র্য বানাতে প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। তার নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। হাতুড়ি, বাটালি দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে তিনি ভাস্কর্য তৈরি করেন। ২৭ বছর আগে চা বাগানের গাড়ো লাইনে একটি খোপরি ঘরের সবুজ কাঠের ভাস্কর্যের কাজ শুরু করেন। প্রথমদিন লম্বা এক টুকরা কাঠ কুড়িয়ে এনে ছেলের জন্য গিটার বানাতে বসেছিলেন। কয়েকদিন কাটাকাটির পর ওই কাঠের টুকরাটি বরি ঠাকুরের (বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর) মুখের আকৃতি হয়ে যায়। এরপর শিরিশ পেপার দিয়ে ঘসে এর ওপর বার্নিশ করেন। তখন এটি অবিকল রবি ঠাকুরের মতো হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি এক এক করে কাঠের ভাস্কর্য বানাতে থাকেন। প্রথমে এগুলো তিনি পরিচিতজনকে উপহার দিতেন। ২০০১ সালে তিনি কারিতাসে নাইট গার্ডের চাকরি নেন। সেখানেও তিনি কাজের ফাঁকে ভাস্কর্য বানাতেন। একদিন তার আগ্রহ দেখে কারিতাসের হস্তশিল্প ডিজাইনার সুকুমার পাল তাকে ভাস্কর্য বানানোর কিছু কৌশল শিখিয়ে দেন। ২০০৭ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি এসে নিয়মিত কাঠের ভাস্কর্য বানাতে থাকেন। এখন অনেকেই তার বাড়ি থেকে এই ভাস্কর্য কিনে নিচ্ছেন।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই খোপরি ঘরের বারান্দায় বসে সবুজ আপন মনে কাঠের টুকরায় হাতুড়ি বাটালির টুক টুক শব্দে চা কন্যা ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন। পাশেই রাখা শেখ হাসিনা ও মা মারিয়ার ভাস্কর্য। রাধাকৃষ্ণ, জেলে, কৃষক, কচ্ছপ ও গণ্ডারের ভাস্কর্য রয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঠের টুকরা, গাছের ডাল ও শিকড়। বড় ভাস্কর্যের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর ছোটগুলো ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কেউ ভাস্কর্যের অর্ডার দিলে তিনি বানিয়ে দেন। প্রতিটি ভাস্কর্য বানানোর আগে তিনি ওই কাঠের টুকরায় ছবি এঁকে নেন। পরে খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরি করেন।

গত ছয় মাস কষ্ট করে সবুজ তজু কাঠ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষা করছেন। অনেকের কাছেই গিয়েছেন কিন্তু কেউ তাকে সেই সুযোগ করে দেননি। সবুজ তজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভাস্কর্য তুলে দিতে চাই। এতে আমার ছয় মাসের কষ্ট সার্থক হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি বাণিজ্যকভাবে ভাস্কর্য তৈরি করতে পারব। বর্তমানে আমার একটি শোরুম ও কিছু যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর