সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোজায় ভোগাচ্ছে গ্যাস সংকট

এলএনজি আমদানি করেও সমস্যা কাটেনি, শিগগিরই উত্তরণের সুযোগ নেই

জিন্নাতুন নূর

পশ্চিম শেওড়াপাড়ার গৃহিণী নাফিসা তাবাসসুম এবার রোজায় পরিবারকে বাইরের বানানো ইফতারি খাওয়াচ্ছেন। কারণ দুপুরের পর থেকেই চুলায় গ্যাস স্বল্পতায় আর আগুন জ্বলে না। আর গ্যাস ফেরে গভীর রাতে। তা দিয়ে কোনোরকম সাহরি বানিয়ে নেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নাফিসা বলেন, ‘এবার রোজায় গ্যাস স্বল্পতার কারণে এক দিনও বাসায় ইফতার বানাতে পারিনি। চিন্তা করছি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনব। এভাবে আর চলছে না।’

নাফিসার মতোই গ্যাস স্বল্পতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। দিনের উল্লেখযোগ্য অংশেই তাদের গ্যাস সংকটে পড়তে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক কাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, একইভাবে সমস্যা হচ্ছে ইফতার ও সাহরির খাবার বানাতে। বিকল্প হিসেবে অনেকেই বাইরের খাবার খাচ্ছেন। এলপি গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারে ঝুঁকছেন। আর নিম্নবিত্তরা মাটির চুলায় কাজ সারছেন। ক্ষুব্ধ কয়েকজন গ্রাহক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এর ওপর প্রতি মাসে গ্রাহককে বাড়তি মূল্যে গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজন মেটাতে এলপি গ্যাস, ওভেন ও ইলেকট্রিক চুলা কিনতে হচ্ছে। এতে সংসারের খরচ আরও বেড়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার রমজানে গ্রাহকদের গ্যাস সংকটে পড়তে হচ্ছে এ কথা সত্য। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আবার শুরু হলেও তা আগের তুলনায় কম। এ ছাড়া ঢাকা ও আশপাশের এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেশি হয়ে পড়ায় আগের চেয়ে গ্যাসের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকেও (পিডিবি) গ্যাস দিতে হচ্ছে। তিতাসের এলাকাগুলোতে দৈনিক ২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে।

কিন্তু আমরা এখন পাচ্ছি ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখনো ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের অভাব রয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকেও যে বাড়তি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে এমন নয়। গ্যাসের এই সংকট পুরো গ্রীষ্মকালেই থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যদিও ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে এলএনজি আমদানির কারণে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার রমজান মাস শুরুর প্রথম থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি আবাসিকে সাহরি ও ইফতারের সময়ও গ্যাস থাকছে না। থাকলেও গ্যাসের চাপ এতই কম যে তাতে রান্নার কাজ করা যাচ্ছে না।

ঢাকার টিকাটুলী, মালিবাগ, মিরপুর, মগবাজার, আজিমপুর, লালবাগ, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনির আখড়াসহ অন্য এলাকাগুলোতে গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার আশপাশের এলাকার মধ্যে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পুনরায় এলএনজি সরবরাহের পর দিনে গ্যাস পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে ধীরে ধীরে চাপ কমে যায়।

দায়িত্বপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন ধরেই এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে গ্যাস সংকট কেটে যাবে বলে গ্রাহকদের আশ্বাস দিয়ে এলেও বাস্তবে তা হয়নি।

টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে সঞ্চালন লাইনে খোলাবাজারের এলএনজি আবারও যোগ হয়। কিন্তু এর পরও সংকট না কেটে উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে।

পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে সরবরাহ কমানো হয়েছে। আবার রমজানে বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর