বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

সম্পদে সমৃদ্ধি আনে জাকাত

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সম্পদে সমৃদ্ধি আনে জাকাত

ইসলাম নামক ধর্মটি যে পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার তৃতীয়টি হলো জাকাত। একজন মানুষ ইমান গ্রহণের পরপরই তার ওপর নামাজ ফরজ। নামাজের পরই কোরআনে জাকাতের কথা বলেছেন আল্লাহ তায়ালা। হাদিসেও সাওম ও হজের আগে জাকাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ক্রমবিন্যাসের একটি তাৎপর্য এ রকম হতে পারে- ইমানদার নামাজি ব্যক্তির অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। আগামী এক বছরে সে নিজে স্বাবলম্বী হবে এবং সমাজের দুস্থ-অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার ব্রত গ্রহণ করবে। সংক্ষেপে এই হলো জাকাতের মর্মকথা। এবার শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণ। মুজামুল ওয়াসিত প্রণেতার মতে, জাকাত শব্দের অর্থ ক্রমে বাড়তে থাকা ও পরিমাণে বেশি হওয়া, প্রবৃদ্ধি লাভ করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, পবিত্র ও শুদ্ধ হওয়া। বিখ্যাত আরবি অভিধান লিসানুল আরবের লেখক বলেন, ‘জাকাত অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধ্যিক্য ও প্রশংসা। এ চারটি অর্থেই কোরআন ও হাদিসে জাকাত শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়।’ জাকাত শব্দের ভিতর দুটি অর্থ পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে অনবরত বাড়তে থাকা। আরেকটি হচ্ছে শুদ্ধ ও পবিত্র হওয়া। আরবি ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, যে জিনিস ক্রমে বাড়তে থাকে সে জিনিস অবশ্যই শুদ্ধ ও পবিত্র হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন আরবিতে বলা হয়, ‘জাকাজ জারউ ইয়াজকুজ জাকাহ’। অর্থাৎ কৃষির ফসল বেড়েছে, যেমনি করে প্রতি বছর বাড়তে থাকে। কৃষির ফসল ক্রমে বাড়তে থাকবে তখনই যখন ফসল আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন হয়। তাই জাকাত শব্দটির অর্থ ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি পবিত্র ও খাঁটি হওয়া। মন্দ কিছু যদি ক্রমে বাড়তে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে জাকাত শব্দের প্রয়োগ সঠিক হবে না। যেমন আরবি রিবা শব্দের অর্থও বৃদ্ধি পাওয়া। কিন্তু এ বৃদ্ধির সঙ্গে পবিত্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সুদের প্রতিশব্দ হিসেবে ‘রিবা’ ব্যবহার করা হয়েছে।

আল্লামা ইউসুফ কারজাভি (রহ.) তার বিখ্যাত ফিকহুজ জাকাত গ্রন্থে লিখেছেন, জাকাত শব্দটি যদি মানুষের গুণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তাহলে অর্থ হবে সুস্থতা-সুসংবদ্ধতা। যেমন বলা হয়, ‘রজলুজ জাকা’। অর্থাৎ পবিত্র জাতির মধ্যে চরম মাত্রার কল্যাণকর ব্যক্তি। আবার বলা হয়, ‘জাকাল কাজিস শাহুদ’। অর্থাৎ সাক্ষ্য-প্রমাণে অধিকতর কল্যাণকর বিচারক।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর