বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সুজনের অনলাইন বৈঠক

নির্বাচনের ওপর দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হচ্ছে এর ওপর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকখানি নির্ভর করছে। গত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি বলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে, সংসদকে বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে ভবিষ্যতের নির্বাচনও অগ্রহণযোগ্য হতে পারে এবং এর ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে।

গতকাল সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ পড়েন সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্যানেল আলোচক ছিলেন সুজন সহ-সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ, চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. রিদওয়ানুল হক। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুজন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসসহ অন্যরা। ড. বদিউল আলম মজুমদার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, নির্বাচন এক দিনের বিষয় নয়, এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া- দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণা, এজেন্ট নিয়োগ, ভোটারদের ভোট প্রদান, নির্বাচনী বিরোধ নিরসন পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের সমান সুযোগ না থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় না। তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক তথা গ্রহণযোগ্য করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা আজ জরুরি। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যা থাকতে পারে তা হলো- ১. নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য, ২. সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, ৩. জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা, কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ৪. আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও মানবাধিকার সংরক্ষণ, ৫. রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এবং একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন। এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, গত ৫০ বছরে দলীয় সরকারের অধীনের সুষ্ঠু নির্বাচন দেখি নাই। এবারও তা-ই হবে বলে মনে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থান হবে বলেও মনে হচ্ছে না। ঘুরেফিরে ওই একটি কথাই আসে- নির্দলীয় সরকার চাই। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান দুটি দলের যে কোনো একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে দুটি দলই অংশগ্রহণ করে। আর এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আলী রীয়াজ বলেন, মূল সংকটটা হলো রাজনৈতিক। সংকটটা সাংবিধানিক সংকট না। অংশগ্রহণমূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না তার সংকট। রাজনীতিকে এককেন্দ্রিক করার প্রবণতা। এম এ মতিন বলেন, বর্তমান সংকটটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক উভয়েই। অনেক সংকটের মূলে আছে রাজনীতি, কিন্তু সমাধান করতে হবে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে। আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র শুধু না বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। অর্থনীতি, পরিবেশ, রাজনীতি সবকিছু নির্ভর করছে এর ওপর। তোফায়েল আহমেদ বলেন, যত সংস্কারই করা হোক মানুষ ভোট দিলে গণ্য হবে এটি দৃশ্যমান হতে হবে। কিন্তু মানুষ নির্বাচনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ভোট কেন্দ্রে আসছে না। প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করলে ভোটে একটি ভারসাম্য আসতে পারে।

সর্বশেষ খবর