বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বজনদের সামনে কুপিয়ে চোখ তুলে হত্যা

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মাহাবুব আলম (৩০) নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে, কুপিয়ে ও চোখ তুলে হত্যা করা হয়েছে। তাকে বাঁচাতে বাবা-মা-ভাই ও চাচার অনুনয়-বিনয় ও প্রাণভিক্ষার আকুতিতে কর্ণপাত করেনি ঘাতকরা। স্বজনদের সামনেই চলে মাহাবুবের ওপর ধারাবাহিক পাশবিক নির্যাতন। নির্যাতনের কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল সকালে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের সিংরাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহাবুব আলম সিংরাটির হানিফ মিয়ার ছেলে এবং দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। জানা গেছে, একই গ্রামের হাশমত মিয়ার কাছ থেকে মাহাবুব একটি জমি বিক্রির জন্য ৩ লাখ টাকা বায়না নেন। কিছুদিন ধরে হাশমত বায়নার টাকা ফেরত চাইছিলেন। সেই টাকা দিতে না পারায় তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করে। নিহত মাহাবুবের চাচা মজিবর রহমান বলেন, ‘একই গ্রামের হাশমত মিয়ার কাছ থেকে মাহাবুব তার একটি জমি বিক্রির জন্য ৩ লাখ টাকা বায়না নেন। কিছুদিন ধরে হাশমত সেই জমি নেবেন না জানিয়ে বায়নার টাকা ফেরত চাইছিলেন। মাহাবুব টাকা ফেরতের জন্য সময় চায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। গতকাল সকালে মাহাবুব উপজেলার কালিবাড়ী এলাকায় গেলে সেখানে হাশমতের লোকজন প্রথমে তাকে মারধর করে। এরপর অপহরণ করে মাহাবুবকে তারা একটি সিএনজিতে হাশমতের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে হাশমত, তার ভাই কিসমত, কামালসহ পরিবারের লোকজন পর্যায়ক্রমে তাকে মারধর করতে থাকে।’ মজিবর বলেন, “খবর পেয়ে মাহাবুবের বাবা হানিফ মিয়া, মা তাহেরা বেগম, দুই ভাই মহিবুর ও হাবিবুর এবং আমি হাশমতের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মাহাবুবকে তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করছে। তারা লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাকে পেটাচ্ছে। ওই সময় আমরা টাকা পরিশোধ করে দেব জানিয়ে মাহাবুবের প্রাণভিক্ষা চাই। কিন্তু আমাদের অনুনয়-বিনয়ে তাদের মন একটুও গলেনি। উল্টো আমাদের সামনেই মাহাবুবের একটি চোখ উঠিয়ে ফেলা হয়। হাতুড়ি দিয়ে পর্যায়ক্রমে তার মাথায় আঘাত করে মাথার খুলি ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ওই দৃশ্য সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে মাহাবুব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা আমাদের বলে, ‘এবার নিয়া যা।’ আমরা দ্রুত তাকে নিয়ে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখান থেকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা জেনারেল হাসপাতালে এলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।” মাহাবুবের বাবা হানিফ মিয়া ও মা তাহেরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা প্রভাবশালী। তাই আমাদের সামনেই পোলাডারে পিটাইয়া মাইরা ফালাইল। আমরা এর বিচার চাই।’ আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, এ ঘটনায় কিসমত ও কামালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সর্বশেষ খবর