শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আদানির বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত

৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে রিলায়াবেল রান টেস্ট

জিন্নাতুন নূর

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে গত (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাত থেকে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি হয়। ১৪ দিনের নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা (রিলায়াবিলিটি টেস্ট) সফলভাবে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে গত ৯ মার্চ থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে, রিলায়াবেল রান টেস্ট (আরআরটি) ৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টায় শেষ হয়েছে। সে হিসেবে ৬ এপ্রিল থেকে এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ (সিওডি) গণনা করা যায়। এখন শুধু বাণিজ্যিক উৎপাদনের ঘোষণা বাকি। উল্লেখ্য, নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা বলতে এখানে সমগ্র উৎপাদন কেন্দ্রে টানা ৭২ ঘণ্টা পূর্ণ সক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনাকে বোঝানো হয়েছে। পিডিবির কারিগরি কমিটির উপস্থিতিতে এই পরীক্ষা শেষ হয়। বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তারা (আদানি পাওয়ার) পরীক্ষার মাধ্যমে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ (সিওডি) ঘোষণা করা হবে।’ অন্যদিকে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেশে এসেছে। শিগগিরই এর সিওডি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। গোড্ডায় ৪২৫ হেক্টর জমির ওপর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দিনের পিক আওয়ারে ৬৮৫ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে ৭৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটারের ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ আসছে তা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টের প্রথম ইউনিট থেকে আসছে।

আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ইউনিটটি শিগগিরই উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। আর দেশের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় ইউনিটটি নির্ধারিত সময়ের দু-এক মাস পর উৎপাদনে আসতে পারে। আদানির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তির মেয়াদকালে পিডিবি প্রতি বছর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩৪ শতাংশ নিতে বাধ্য। আদানি গ্রুপ গত ২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানায়, ১৪ হাজার ৮১৬ কোটি রুপি প্রাক্কলিত খরচে নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান কয়লার হারে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা শূন্য দশমিক ১৩৬৩ ডলার হবে। প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় জ্বালানি খরচ হবে শূন্য দশমিক ০৯৩৯ ডলার ও ক্যাপাসিটি চার্জ হবে কিলোওয়াট প্রতি শূন্য দশমিক ০৪২৪ ডলার। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রামপাল, মাতারবাড়ী ও এস আলম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তুলনায় আদানির উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য কখনোই বেশি হবে না। আদানি গ্রুপ ও পিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে ইন্দোনেশিয়ার এইচবিএ সূচক ও অস্ট্রেলিয়ার গ্লোবাল কোল নিউক্যাসল সূচকের গড় মূল্যের ভিত্তিতে গোড্ডার কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর