সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইমো হ্যাকার চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইমো হ্যাকার চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

রাজশাহীর বাঘা থানার আরাজী চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শিপন আহম্মেদ ওরফে আরিফ। ২০১৯ সালে পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে গ্রামের বন্ধু মহলের কাছ থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে সে নিজেই প্রশিক্ষক হয়ে বিভিন্ন বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং প্রতারণার একটি অংশ নেওয়ার শর্তে তাদেরকে দিয়ে প্রতারণার কাজ করাতে থাকেন। আরিফ প্রধানত সৌদি আরব ও কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসীদের টার্গেট করতেন। ইমো আইডি হ্যাকের পর নানা কৌশলে প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আরিফ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুই সহযোগী হলেন- মজিবুল ইসলাম ওরফে নজিবুল ইসলাম ও রাসেল আহম্মেদ। গত শুক্রবার রাজশাহীর বাঘা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। ডিবি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা সর্ব প্রথম তার নিজের মোবাইলে একটি ফেইক মোবাইল নম্বর দিয়ে আইডি খোলে। গুগোল ব্রাউজার (গুগোল প্লে স্টোরে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ) থেকে ‘ইমো ফাইন্ড ফ্রেন্ড’ নামক থার্ডপার্টি অ্যাপস ব্যবহার করে এগারো ডিজিটের ফোন নম্বর ব্যবহার করে সার্স দিয়ে ১০-৫০টি ইমো অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করা হতো। সেখান থেকে প্রবাসীদের টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করা হতো। টার্গেট নির্ধারণের পর ইমো আইডিটি প্রথমে একটি ইমো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করে পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন উপায়ে কল ও স্টিকার সেন্ড করে বিরক্ত করে কৌশলে তাকে ইমোতে কল দিয়ে বলা হয়, আপনি কি গ্রুপে থাকতে চান?

স্বাভাবিকভাবে গ্রুপে বিরক্তি ফিল করায় ভিকটিম বলে, না আমি থাকতে চাই না, আমাকে গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দেন। প্রতারক হ্যাকার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভিকটিমকে বলেন, গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দিচ্ছি। তবে, আপনার ফোনে একটি ওটিপি কোড গিয়েছে সেটি দেন। কোড নিয়ে প্রতারক তার ফোনে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। সেখান থেকে টার্গেটের বন্ধু-বান্ধব বা নিকট আত্মীয়দের বাছাই করে। অসুস্থতা বা জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়স্বজনদের কাছে টাকা চেয়ে ইমোর মাধ্যমে মেসেজ পাঠানো হয়। ভিকটিমের স্বজনরা এ ধরনের মেসেজ বিশ্বাস করে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হয়। ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ জানিয়েছে, প্রবাসীদের টার্গেট করে টাকা পাওয়া সহজ। কারণ দীর্ঘ দূরত্ব ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকার কারণে যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ কম থাকে। এ জন্যই মূলত প্রবাসীদের টার্গেট করতেন তিনি। একবার একজন প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায় হলে, তিনি ফেইক ইমো অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দিতেন এবং আর একটি নতুন ফেইক ইমো অ্যাকাউন্ট খুলতেন। এভাবে ইমো হ্যাকিং করে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ টাকা আদায় হয় বলে সে একাজ অব্যাহত রাখে। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার ডিএমপির রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে আরিফ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের রিমান্ডে আনা হয়। কখনো অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত ইমো নম্বর অথবা ওটিপি শেয়ার না করার অনুরোধ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর