বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বঙ্গবাজারে অস্থায়ী দোকান বসছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ বেশির ভাগই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বালু ফেলে ইট বিছানোও প্রায় শেষ। চৌকি বসিয়ে ব্যবসার পরিবেশ অনেকটা গড়ে তোলা হয়েছে। আজ সেখানে বসানো হবে অস্থায়ী দোকান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র অস্থায়ী দোকান বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এরপর ব্যবসায়ীরা দোকান বসাবেন। তবে আগুনে চার মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৬১ জন হলেও দোকান বসানো যাবে মাত্র ৮০০টি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ীই অস্থায়ী দোকান বসাতে পারবেন না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ-শঙ্কা কাজ করছে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির অস্থায়ী ক্যাম্পে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্যবসায়ীদের  মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা, কমিটির কার্যক্রম ও এক কমিটিকে বাদ দিয়ে আরেক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল পোড়া বঙ্গবাজার মার্কেট পরিদর্শন করেছে। আগুন লাগার কারণ, ভয়াবহতা, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা সত্ত্বেও আগুন নেভাতে বেগ পাওয়ার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং কীভাবে দ্রুত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা যায়, সে কৌশল নির্ধারণ ছিল পরিদর্শনের মূল লক্ষ্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গা। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১০৬০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৪০ গাড়ি বালু ফেলা এবং প্রায় ৯০ হাজার ইট বিছানো হয়েছে। পুরো এলাকায় প্রায় ২.৫ লাখ ইট বিছানো এবং প্রায় ১৫০ গাড়ি বালু ফেলা হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, আগুনে পোড়া জামা-কাপড়, বাঁশ, কাঠ, রড, গ্রিল, তার, সার্টারসহ অন্যান্য মালামাল পরিষ্কার কাজ প্রায়ই শেষ। সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িযোগে সেখান থেকে এসব বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পোড়া মালামাল সরাচ্ছেন, কেউ বালু ফেলছেন, কেউ ইট বসানোর কাজ করছেন। আগুনে দোকান-মালামাল পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেলেও দন্ডায়মান ছিল চার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির অফিস ভবন। যেন মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে চারটি ভবন। তিন-চার তলা বিশিষ্ট সমিতির ভবনগুলোও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আজকের মধ্যে পুরো এলাকায় বালু ফেলা ও ইট বিছানো শেষ হবে বলে মনে করছেন ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. হায়দর আলী। এরপর রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে উপরে ত্রিপল টাঙানো হবে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল (আজ) দুপুরে মেয়র দোকান বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সাড়ে ৩/৫ ফিট সাইজের চৌকি বানিয়ে নিয়ে আনবেন, যে যার জায়গায় দোকান বসাবেন। চৌকি বিছানোর পর সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ী দোকান বসাতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো দোকান অক্ষত ছিল না। নিচ তলা, দ্বিতীয় তলা, তৃতীয় তলার কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবাই হয়তো বসাতে পারবেন না। যার একাধিক দোকান ছিল তিনি একটি দোকান বসাতে পারবেন। এরপরও সবাই জায়গা না পেলে পরে সেটি দেখা যাবে। সোমবার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা অনুদান এসেছে।

সিটি করপোরেশন আর ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, আগুনে চার মার্কেটের অর্থাৎ বঙ্গ, গুলিস্তান, আদর্শ ও মহানগরী মার্কেটের ২৯৬১ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর অস্থায়ী দোকান বসানোর জন্য প্রস্তুত করা বঙ্গবাজারের সেই জায়গায় বড়জোর দোকান বসানো যাবে ৭০০-৮০০টি। আদর্শ মার্কেটের (ইউনিট) সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, প্রথম দিকে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা চার মার্কেট সমিতির নেতারা এ বিষয়ে বসব। এরপর কোন মার্কেটের কতজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দোকান বসাবেন, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরাও বুঝতে পারছি না, এত ব্যবসায়ীকে কীভাবে জায়গা দেব।

তবে দোকান পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। আগুনে আশপাশের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটগুলো খুললেও গতকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। নিজস্ব লাইট জ্বালিয়ে ক্রেতার আশায় বসে আছেন দোকানিরা। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে। আগুনে অনেক তার পুড়েছে, তাই বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আগে তারের লাইন স্থাপন করতে হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের অগ্নি অনু-বিভাগের উপসচিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা জানার চেষ্টা করেছি আগুন লাগার কারণ। আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী, স্টেকহোল্ডার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারের পক্ষ থেকে এটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, ব্যবসায়ীদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সেসব নির্ধারণ করে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করব। সে জন্য আমরা ধাপে ধাপে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।

এদিকে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ফান্ড রেইজ করার জন্য বলা হয়েছে, আমি সে চেষ্টাই করছি। সে জন্যই আমার বঙ্গবাজারে যাওয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে খুবই বিরক্ত হয়েছি। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব। কারা ক্ষতিগ্রস্ত, কারা নতুন করে অ্যালোটমেন্ট পাবে তা ঠিক করবে সিটি করপোরেশন। হাতাহাতি-হট্টগোলের কারণ সম্পর্কে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, এখানে ২ হাজার ৯৬১ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোনো দোকান অক্ষত ছিল না। নিচ তলা, দোতলা, তিন তলার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু কেউ কেউ এসে বলা শুরু করল এখানে নাকি ২৬০০ দোকান। বাকি দোকান নাকি ঘাপলা। এটা শুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর