বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

পয়লা বৈশাখ ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

সাখাওয়াত কাওসার

পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গ্রহণ করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে কোনো আশঙ্কার কথা উঠে না এলেও প্রস্তুতিতে কোনো কমতি রাখছে না র‌্যাব-পুলিশসহ সব সংস্থা। তবে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে হুমকি-সংবলিত একটি চিরকুট পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি বড় উৎসব উদ্‌যাপনস্থলগুলো সিসিটিভির আওতায় নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কেউ গুজব ছড়িয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে কঠোর নজরদারি। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে পয়লা বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে এখনো কোনো ঝুঁকি নেই। তবে আপনারা জানেন নববর্ষের সময় অনেকেই অনেক কিছু বলে থাকেন। সেজন্য অনেকেই রটনা রটানো ও ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব দিক দিয়ে সেগুলো মনিটর করছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত বড় কোনো নিউজ আসেনি।’ ঈদুল ফিতরের সময় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ছুটি প্রদান, সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখা নিয়ে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় শাজাহান খান এমপি, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা দেশের মার্কেট, শপিং মল ও রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইফতার, সাহরি ও তারাবি নামাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ একযোগে পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তা হুমকি পাইনি। এর পরও নির্বিঘ্নে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ জানা গেছে, পয়লা বৈশাখ নির্বিঘ্ন করতে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা শহরের সব মার্কেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। সহজে মার্কেট এলাকায় চলাচলের জন্য ট্রাফিকব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। ইভ টিজিং প্রতিরোধে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যদের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত এসেছে। সব ডিভিশনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে অনেক মানুষ একত্র হয় সেখানে নারীরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। সেখানে সাদা পোশাকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ঘিরে থাকবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিশেষ তৎপরতা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে এবং বিশেষায়িত যন্ত্রের মাধ্যমে করা হবে সুইপিং। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের ভেন্যুগুলোর দিকে থাকছে বিশেষ নজর। এরই মধ্যে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ভেন্যুর বিষয়ে তালিকা করে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নদী এবং হাতির ঝিলের দিকে বিশেষ নজর থাকবে নৌপুলিশের। আজ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার রমনা বটমূলে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হবেন। একই সঙ্গে র‌্যাব মহাপরিচালকও মুখোমুখি হবেন গণমাধ্যমকর্মীদের। আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করবেন গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। এদিকে পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘যে কোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্ততি রয়েছে। ডগ স্কোয়াড, সোয়াত, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ ডিএমপির প্রতিটি ফোর্সকে অ্যাকটিভ রাখা হবে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে।’ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ মনিটরিং করছি। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। দু-এক জন হুমকি দিচ্ছে এটা আমরাও দেখছি। তবে এজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রেখেছি আমরা। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা থাকবেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, হেলিকপ্টারসহ সব বিশেষায়িত ইউনিটকে। রাজধানীতে আমরা ডিএমপির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।’

হুমকি-সংবলিত চিরকুট : চিরকুটে বলা হয়েছে : ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কাজটা র্শিকের। এখানে এসে ক্ষতি কোরো না তোমাদের। হামলা হতে পারে এনিটাইম। ওই দিনের দাজ্জাল বাহিনী পাবে না টের মোদের।’ গতকাল সকালে এক শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি-সংবলিত একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এর আগে রবিবার মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। এতে বলা হয়েছে, পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণ একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করে এই পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে একটি কৃত্রিম কার্যকলাপ বাঙালি সংস্কৃতি পয়লা বৈশাখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত এ কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে পয়লা বৈশাখের কোনো সম্পর্ক নেই।

সর্বশেষ খবর