শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

গাজীপুরে মাঠ ছাড়বেন না কেউই

খায়রুল ইসলাম ও আফজাল, গাজীপুর

গাজীপুরে মাঠ ছাড়বেন না কেউই

আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ২৫ মে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৭ নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না তারা। বিএনপি প্রার্থী না দিলে মেয়র পদে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই। জাতীয় পার্টির একজন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন মেয়র পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন (মনোনয়ন ফরম বিতরণের তালিকা ক্রম অনুযায়ী) গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মেসবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মো. আবদুল আলীম মোল্লা, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান সেলিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মো. আজহারুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস এম আশরাফুল আলম, গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আবদুল কাদের, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য মো. হারুন-অর-রশীদ ও যুবলীগের সদস্য মো. রুহুল আমিন ম-ল। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান আসন্ন সিটি নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে গাজীপুরে আজকের এই পর্যায়ে আনার ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে আমারও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাজনীতির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাছাড়া আমি টঙ্গী পৌরসভার তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। স্থানীয় সরকার পরিচালনা করার জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন সেই প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বিশ্বাস দল আমাকে নৌকা দেবে। ২০১৩ সালে দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি, যে কারণে এই সিটিতে বিএনপি পাস করে। এরপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়, আমি লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছি। এখানকার মানুষ আমাকে চায়, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। আশা করি দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতারা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ক্লিন ইমেজ ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমি পর পর দুবার সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট শহর নির্মাণ এবং জনগণের পাশে থেকে স্মার্ট সেবা উপহার দিতে চাই। আমি শতভাগ আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশা করছি পরিচ্ছন্ন একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বিবেচনা করলে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং গত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, দল যদি নির্বাচন করে, তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করব। তিনি বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচন করত, তাহলে নির্বাচন জমে উঠত, মানুষ আনন্দ পাইত। এখন তারা তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচন করলে কেমন হবে? তারা যেটা চাইব সেটাই হবে। বিএনপি তো সিদ্ধান্ত নেয়নি যে নির্বাচন করবে। সিদ্ধান্ত হলে আমিই নির্বাচন করতাম। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলে তো আমি শতভাগ নিশ্চিত দলের মনোনয়ন পাব। এ ছাড়া দল নির্বাচনে অংশ নিলে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিনের নাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে দল থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনসাধারণের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি আশা করি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দলের সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের কর্মকা- পরিচালিত হবে বলে তিনি জানান। তৃণমূল পর্যায়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং থাকবে বলেও তিনি জানান। তিনি গাজীপুরকে একটি বুদ্ধিভিত্তিক আদর্শ সিটি করপোরেশন ও সবুজ গাজীপুর গড়তে চান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেয়র পদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য হলেও একটা ভালো ভোট দরকার। মানুষ যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে এবং জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে এমন একটা পরিস্থিতি ও পরিবেশ জাতীয় নির্বাচনের আগে পাওয়া দরকার। এ জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সদিচ্ছা লাগবে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে তাহলে অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে সাংগঠনিকভাবে ও জনগণের পাশে থেকে বিভিন্নভাবে কাজ করছি। ৫৭টি ওয়ার্ডেই আমাদের কমিটি আছে। শিগগিরই আমরা ইশতেহার ঘোষণা করব। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে ২৫ মে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল। বাছাই ৩০ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মে এবং ভোট গ্রহণ হবে ২৫ মে। সব ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৩, নারী ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ এবং হিজড়া ভোটার ১৮ জন।

 

সর্বশেষ খবর