মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুরকারীরা রাজনৈতিক কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, এসব কিছুর পেছনে যদি কোনো উদ্দেশ্য থাকে, কোনো নাশকতা থাকে বা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকে সেটাও আমাদের কাছে চলে আসবে। আমরা সে জন্য কাজ করছি।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, গত ৫৮ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলছে। এ অবস্থায় মার্কেটগুলোয় হঠাৎ আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার এবং নবাবপুরে ইলেকট্রিক মার্কেটে আগুন দেখেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন হঠাৎ করে একসঙ্গে এত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে কেন? সেই ঘটনাগুলো আমরা তদন্ত করছি। আমাদের একটা টিম আগে থেকেই কাজ করছিল। যে টিম কাজ করছিল তাদের আগুন লাগার মূল কারণটা কী, উৎসটা কী, তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন ধরার সময় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। যে গাড়িগুলো আগুন নেভাবে সেগুলো ভাঙচুর করা হলো। ভিডিওর মাধ্যমে যাদের চিহ্নিত করেছি ও ধরেছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ভাঙচুরগুলো করেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দলের কর্মী বলে তারা পরিচয় দিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা নাশকতা হতে পারে চিন্তা করছি, আমরা মনে করছি কেউ উদ্দেশ্য করে এটা করাতে পারে। তদন্তের পর আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। আমরা এটা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি, আমরা এটা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী একটা নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন এখানে কী করবে? বঙ্গবাজারকে অনেক আগেই সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস পরিত্যক্ত মার্কেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও তো তারা কোর্টের একটা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কেট চালাচ্ছিল। সিটি করপোরেশন তাদের কাজ করছে। এগুলো নিয়ে অনেকে হয়তো বিভ্রান্তিকর নিউজ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

ঈদে লম্বা ছুটি পেতে যাচ্ছে, এত লোক থাকার পরও ব্যবসায়ীরা নাজেহাল। তাহলে বন্ধে আপনারা নিরাপত্তার জন্য কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটি মিটিং করেছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যাতে বাড়ি যাওয়া মানুষগুলো নির্বিঘ্নে যেতে পারে। সে জন্য রাস্তাঘাটগুলো সচল রাখার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছি। গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পকারখানাগুলো যাতে আস্তে আস্তে বা পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়। এসব বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া যেখানে দুর্ঘটনা ঘটবে, সেখানে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সবগুলো মার্কেটে তারা সব সময় সচেষ্ট থাকবে। যাতে করে আগুন না লাগে। ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস সব মার্কেটে গিয়েছে। পরীক্ষা করে কর্মকর্তারা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারে। আর নিরাপত্তার কথা যেটা বলেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী দেশে যেসব জায়গায় মার্কেট রয়েছে, সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে। ৫৮টি মার্কেট ঝুঁঁকিপূর্ণ, সেসব মার্কেট কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৮টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে, এ মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা যারা আছেন তারা এটার ব্যবস্থা নেবেন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মার্কেটগুলো চালাবেন কি না এটা তারা বলতে পারবেন। আমি মনে করি, অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেবেন।

কয়টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। একটি ফায়ার সার্ভিসের, একটি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের এবং অন্যটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেখানে সরকারি সব অফিস, কেবিনেটের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত সচিব, এর সঙ্গে কেবিনেট ডিসি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, সিটি করপোরেশনের সদস্যসহ ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে নতুন এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে। এ দুটি বিষয় যেমন, এই অগ্নিকান্ড নাশকতা কি না, রাজনৈতিক কোনো ইন্ধন কি না, সে বিষয়গুলো তাদের দেওয়া হয়েছে। তারা এটা আরও বিস্তারিত তদন্ত করবে এবং দ্রুত প্রতিবেদন দেবে। এ জন্য দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর