বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট চট্টগ্রাম

অন্য দেশও ব্যবহার করছে এ রুট, যুক্ত দেশি বিদেশি চক্র

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিটে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান থেকে উদ্ধার হওয়া বন্যপ্রাণী চট্টগ্রাম হয়ে পাচার হচ্ছে দেশ-বিদেশে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের রুট ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক চক্র মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে পাচার করছে বন্যপ্রাণী। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বন্যপ্রাণী পাচার রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও কোনোভাবেই থামছে পাচার।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করেছে। সে হিসেবে পাচার চক্রের সদস্যরা চট্টগ্রামকেও বন্যপ্রাণী পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। পাচার রোধে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে সাফল্যও পাওয়া যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪২ হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে সব যে পাচারের পথে উদ্ধার করা হয়েছে এমনটা নয়।’

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুল আলম বলেন, ‘বন্যপ্রাণী পাচার নিয়ে আমরা সরাসরি কাজ করি না। তবে সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে আমরা তাদের সহায়তা করি।’ এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণী উদ্ধারের নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার ওসি আতিকুর রহমান। বন্যপ্রাণী পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পেয়েছি বন্যপ্রাণী পাচারের দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত। এখান থেকে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণী ঢাকা হয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। এ পাচারের সঙ্গে দেশীয় কোন কোন চক্র সম্পৃক্ত রয়েছে তা তদন্তে করে বের করা হচ্ছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীর চুনতি গহিন অরণ্যে সক্রিয় রয়েছে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের সদস্য। তারা স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রায় বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রাণী ধরে। পরে তা নিয়ে আসে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের নূপুর মার্কেট, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন স্থানে। এখান থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব প্রাণী পাচার করে ঢাকায়। এ ছাড়া মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকেও বাংলাদেশের রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণী পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া দেশগুলোতে বন্যপ্রাণী ও তাদের দেহ ওষুধ তৈরি ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। আবার অনেকে খাঁচায় বন্দি করে বাসার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এসব প্রাণী ও তাদের দেহের অংশ কিনে থাকে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, গত দেড় বছরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়ে ৪শর অধিক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়। অভিযান ও উদ্ধার হওয়া বন্যপ্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে- মায়া হরিণ, ভালুক, লজ্জাবতী বানর, তক্ষক, শজারু, বিপন্ন কচ্ছপ, বিপন্ন প্যাঁচা, বনরুই, বানর, বন্য শূকর, বেজি, অজগর সাপ, শঙ্খিনী সাপ, পদ্মগোখরা, গুইসাপ, দুধরাজ সাপ, হগ ব্যাজার, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, গন্ধগোকুল, বন্য শূকর, বিপন্ন উল্লুক, বুলবুলি, বানর, ঘুঘু, শালিক, প্যাঁচা, টিয়া, কালিম, চিল, কাছিম ইত্যাদি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বন থেকে পাচার হওয়া বিপন্ন প্রাণী পাচারের নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক চক্র। বন্যপ্রাণীগুলো নানা হাত ঘুরে প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাচার করা হচ্ছে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের জনবল সংকটের কারণে একার পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই বন্যপ্রাণী পাচার রোধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অন্য ইউনিটগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর