বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাগরের ১০ খুন নিয়ে যত প্রশ্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সাগরের ১০ খুন নিয়ে যত প্রশ্ন

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ লাশ উদ্ধারের পর থেকে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে নিহত ট্রলারমালিক শামসুল আলম ওরফে শামসু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন। বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।

তিনি জানান, এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি মাতারবাড়ী এলাকার ট্রলারমালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামি ট্রলার মাঝি করিম সিকদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এদের আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটির কোনো ক্লু এ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেছে। মামলার স্বার্থে নিহতদের স্বজন এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে। তদন্ত করেই এসব প্রশ্নের উত্তর বের করা হবে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রবিবার গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা ট্রলারটি নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে শামসুল আলম ওরফে শামসু মাঝি। তার লাশ গ্রহণ করেছেন স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া মামলার বাদীও তিনি। রোকেয়া বেগমও স্বীকার করেছেন ট্রলারটির মালিক তার স্বামী। কিন্তু সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া প্রতিটি ট্রলারের নাম থাকে। আর এই ট্রলারগুলো মালিক সমিতির সদস্য হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিবন্ধনও করতে হয়। তবে শামসু মাঝির ট্রলারটির কোনো নাম ছিল না। কক্সবাজার জেলার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ট্রলারটির গায়ে কোনো নাম ছিল না। ট্রলারটি সমিতির আওতাভুক্তও নয়। এ পর্যন্ত লাশ পাওয়া ব্যক্তিরা প্রকৃত জেলে কি না এ নিয়ে সন্দেহও রয়েছে তাদের। তিনি জানান, সাধারণত জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত ট্রলার ও ডাকাতরা এমন হয়। তাহলে কি আগে থেকে প্রচার হওয়া তথ্য সত্য? এমন প্রশ্নের উত্তর চায় পুলিশ। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ১১ এপ্রিল সাগর থেকে আসা ছয়জন জেলে নিহতের স্বজনদের জানিয়েছিলেন, ডাকাতি করতে গিয়ে তারা হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া হিমঘরে বন্দি করে ট্রলার ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন তারা।

এই ছয়জন হলেন মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আঁধারঘোনা গ্রামের মো. হায়াত, আবদুল মালেক, মোহাম্মদ রিদুয়ান, আবদুল মান্নান, মাহবুব আলম ও নুরুস সামাদ এবং ছামিরাঘোনা এলাকার আবু জাফরের ছেলে নজরুল ও অফিসপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন। ছয়জনের তথ্যমতে প্রচার ছিল, শামসু মাঝির ট্রলারে করে ৭ এপ্রিল সাগরে যান ১৯ মাঝিমাল্লা। গভীর সাগরে ৯ এপ্রিল ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে মাতারবাড়ীর এলাকার জনৈক বাইট্টা কামাল, একই এলাকার নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার এবং তাদের সঙ্গে থাকা মাতারবাড়ীর আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির ট্রলারসহ আরও চার-পাঁচটি ফিশিং ট্রলারকে শামসু মাঝির ট্রলার ধাওয়া করে। এ সময় ট্রলারটি পানিতে ডুবিয়ে মাঝিমাল্লাদের হিমঘরে আটকে দেওয়া হয়। এ তথ্য ছয় জেলে কীভাবে জেনেছেন আর মাতারবাড়ীর যে চার ট্রলারমালিক ও মাঝির কথা এসেছে তারা কারা? এদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করার পর আরও জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপার জানান, নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব বিবেচনা করে মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশের পাঁচটি দল কাজ করছে। ইতোমধ্যে নুরুল কবির ও শামসু মাঝির বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও হত্যা মামলা পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে এমন কয়েকজন পাওয়া গেছে, যারা জীবনে কখনো সাগরে যাননি বলে স্বজনরা দাবি করছেন। নিহত নুরুল কবির এদের ডেকে সাগরে নিয়ে গেছেন। সব বিবেচনায় নিয়ে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে এ ঘটনায় মাদক-সংক্রান্ত বিষয়টিও সামনে এসেছে। এটাও তদন্তে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে চারজনের লাশ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এ চারজনের পরিচয়। এর পরই তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর