বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক দলের জন্য ইসির নির্বাচনী ছাড়!

ভোটের আগে দলের কার্যক্রম খতিয়ে দেখবে ইসি, নতুন দলের নিবন্ধন ভাগ্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর

গোলাম রাব্বানী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জন্য নির্বাচনী ছাড় ঘোষণা করছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন বলছে, সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কার্যক্রম খতিয়ে দেখলে অনেক দলের নিবন্ধন নিয়ে টানাটানি হতে পারে। তাই আগামী নির্বাচনের আগে কোনো দলের কোনো কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না ইসি। যদিও রোডম্যাপে বলা হয়েছিল ‘নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করার আইনানুগ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নিবন্ধিত দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত কমিশন গ্রহণ করেছে।’ তবে হঠাৎ করে ইসির এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়টি কেউ ভালোভাবে নিচ্ছে না। বিশেষ করে ইসির হঠাৎ হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলছেন।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত যাচাই করতে গেলে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। মূলত এমন আশঙ্কা থেকেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে ইসি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে একাধিক নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনারদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত পূরণের বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পক্ষে থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নিবন্ধিত দলগুলোর নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে ইসি সরে এলেও নতুন দল নিবন্ধনের কার্যক্রম চলবে। ইতোমধ্যে ১২ দলের প্রাথমিক তালিকাও করেছে ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) দেওয়া ক্ষমতাবলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেয় ইসি। নিবন্ধিত দলগুলোই কেবল নিজেদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল ৩৯টি। এর বাইরে আদালতের নির্দেশে তৃণমূল বিএনপিকেও নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করলে কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

শর্তগুলো হলো : (১) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনুষ্ঠিত যে কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসনে জয়ী হওয়ার রেকর্ড থাকতে হবে। (২) যে কোনো একটি আসনে দলীয় প্রার্থীকে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে। (৩) কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে। এসব শর্তের পাশাপাশি আইনে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব অর্জন, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা এবং বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করার কথা বলা আছে।

এদিকে বিগত কে এম নূরুল হুদা কমিশন দলগুলো শর্ত পালন করছে কি না, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় গত নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং এরপর ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করেছিল। আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন আদালত। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইসি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ের তালিকায় রয়েছে ১২টি দল। তবে এই ১২ দলের নিবন্ধনও নির্ভর করছে পরবর্তী বাছাই প্রতিবেদনের ওপর। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে ১২ দলের কার্যক্রম, তাদের অফিস যাচাই-বাছাই করবে। তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও আমলে নেবে নির্বাচন কমিশন। ইসির প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে- এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি- বিএসপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে ২০২২ সালের মে মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরে সময় বাড়ানো হয় আরও দুই মাস। ৩০ অক্টোবর শেষ সময় পর্যন্ত ইত্যাদি পার্টি, মুসকিল লীগসহ হরেক নামের ৯৩টি আবেদন জমা পড়ে। এরপর নভেম্বরেই আবেদন বাছাইয়ে নামে কমিশন। কয়েক দফা যাচাইয়ে টিকে যাওয়া ১২টি দলের বিষয়ে এখন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনো একটি শর্ত পূরণ করলে সেই রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়।

সর্বশেষ খবর