বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে গর্ভবতীরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে গর্ভবতীরা

দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু আক্রান্তদের বেশির ভাগই জানেন না, তাদের ডায়াবেটিস আছে। এমনকি দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৭ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভোগেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে জীবন ঝুঁকি, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে মা এবং শিশু দুজনেরই। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। প্রায় ২৭ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা এবং শিশু দুজনেরই বিপদ বাড়িয়ে দেয়। মাতৃ মৃত্যুর বড় কারণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তে শর্করা উচ্চমাত্রায় থাকলে মায়ের পেটে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়, অনেক সময় শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম কিংবা বেশি হতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের ৪০ শতাংশের আজীবন ডায়াবেটিস হয়। বর্তমানে মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে কম বয়সী ছেলেমেয়েদের ওজন বেশি হওয়া। এসব শিশুর বড় একটা অংশ গর্ভে থাকা অবস্থায় মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।’

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ঝুঁকি আরও বেশি

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘মানবদেহে কোনো কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব হলে, উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ পরে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ সম্ভব। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সচেতন করা দরকার। যাদের এখনো হয়নি তাদের প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে এমন পরিবার নেই, যে পরিবারে অন্তত একজন ডায়াবেটিস রোগী অথবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন এমন মানুষ নেই। পরিবারকে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষায় সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। তবে ৭০ শতাংশ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এ জন্য ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে হবে।’

দুই মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে এসেছেন টাঙ্গাইলের আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আয়শা আক্তার। জন্মের পর থেকেই বাচ্চার ঠোঁট কাটা। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। আয়শা আক্তার বলেন, গর্ভধারণের ২৯ সপ্তাহ পর চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষায় রক্তে উচ্চ মাত্রার সুগার ধরা পড়ে। ৩৪ সপ্তাহে সন্তান জন্ম হয়। সেই সন্তানের ঠোঁটই জন্ম থেকেই কাটা। তার চিকিৎসার জন্যই ঢাকায় এসেছি। সন্তানের এ অবস্থার জন্য অসচেতনতা ও ডায়াবেটিসকেই দোষ দিচ্ছিলেন তারা।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল প্রসূতিই নয়, যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস আছে তাদের গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থেকে সন্তান জন্মদানের পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের অর্ধেকেরও বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। শুধু তাই নয়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেওয়ার পরে সন্তান জন্মদান শেষে অনেকেই আর তেমন গুরুত্ব দেন না। এর ফলে নারীদের মাঝে বাড়ছে ডায়াবেটিস, আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রকমের অসংক্রামক রোগে। কেবল সচেতনতার অভাবে নবজাতক ও শিশুরাও বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছে। সন্তান জন্মদানের পরে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে।

 

সর্বশেষ খবর