শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
জমজমাট সিটি ভোট

নির্ভার খোকন, সংশয়ে ফয়জুল ও তাপস

বরিশাল

রাহাত খান, বরিশাল

নির্ভার খোকন, সংশয়ে ফয়জুল ও তাপস

বিএনপিবিহীন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত অনেকটাই নিশ্চিন্ত মেজাজে। বিভিন্ন পেশাজীবী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমর্থন পাওয়ার পর এবার ১৪ দলের শরিক এবং সমমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যান্য দল-সংগঠনের সমর্থন আদায়ে ছুটছেন তিনি। অন্যদিকে জয় পরাজয় নিয়ে নয়, দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলামী আন্দোলন আর জাতীয় পার্টির যত ‘ভয়’ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। এদিকে মনোনয়ন সংগ্রহের পর গতকাল জুমার নামাজের মাধ্যমে প্রথমবার গণসংযোগে নেমে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপনও।

প্রতীক বরাদ্দের আগে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রকাশ্য কর্মসূচি এড়িয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রার্থীরা। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটি এবং জুমার নামাজের সুযোগে নির্বাচনী কার্যক্রম আরও একধাপ এগিয়ে রেখেছেন মেয়র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত গতকাল জুমার নামাজ আদায় করেন নগরীর বেলতলা মাহমুদিয়া মাদরাসা মসজিদে। খুতবার আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বরিশাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিসিসি নির্বাচনে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খোকন সেরনিয়াবাত। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আফজালুল করিম বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে নৌকার প্রার্থী সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং অফিস ও বাসায় আগতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। আফজাল বলেন, বরিশালের সব পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিসিসিতে নৌকা সমর্থন দিয়েছে। এখন ১৪ দলের শরিক ও সমমনা দল-সংগঠনের সমর্থন আদায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। সবাই সমর্থন দিয়েছেন। এদিকে গতকাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

পরে তাপস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনগণের শঙ্কা একটাই- সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তো? তারা একটি সুষ্ঠু ভোট চায়। যার ভোট সে দিতে চায়। জয় পরাজয় হবে। মানুষ চায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের কালচার তৈরি হোক। মানুষের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী করতে তারা (আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন) সব ‘গুছিয়ে’ ফেলেছে। এগুলো অপ্রকাশ থাকে না। বরিশাল সিটি নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে সেটা সরকারের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে হুঁশিয়ারি দেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম গতকাল জুমার নামাজ আদায় করেন দলটির সদর দফতর হিসেবে পরিচিত চরমোনাই মাদরাসা মসজিদে। তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে বরিশালবাসীর নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য হাতপাখা বিজয়ী করার আহ্বান জানান। দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির ও বিসিসির প্রার্থী মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, মানুষ নিরপেক্ষ ভোট চায়। তারা শঙ্কিত ভোট দিতে পারবে কি না। একজন প্রার্থী ছবি-মার্কা দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে ভোট চাইছে। নৌকার পক্ষে বিভিন্ন স্থানে মিছিল হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ সিটি নির্বাচন সরকার পতনের সূচনা করবে। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। মনোনয়ন সংগ্রহের পর গতকাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড গড়িয়ারপাড় এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন। নামাজ শেষে তিনি ওই এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে রূপন গণমাধ্যমকে বলেন, জনগণের দাবি পূরণে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। চারদিকে মেয়র পদ ‘ছিনিয়ে’ নেওয়ার গুঞ্জন চলছে। এ অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। প্রার্থীদের সংশয়ের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনের সম্মানিত স্টেক হোল্ডার। তারা তাদের মতো বলতেই পারেন। কমিশনের আইন ও বিধি অনুযায়ী সব কিছু করা হচ্ছে।

গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, সাবেক মেয়রপুত্রসহ মেয়র পদে নয়জন, ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি পদে ৪১ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন একজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর