রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। গতকাল এসব সংস্থার পক্ষ থেকে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে। পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী উদ্ধার অভিযান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দুর্যোগপ্রবণ উপকূলবর্তী জেলাগুলোর পুলিশ ইউনিটসহ সব পুলিশ ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশনস কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক ঘূর্ণিঝড় মোখার? গতি-প্রকৃতির খোঁজখবর রাখছে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা পুলিশের পাশাপাশি বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর মধ্যে এপিবিএন, নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশসহ পুলিশের সব ইউনিট নিয়োজিত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য ও সেবা গ্রহণের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুমে ০১৩২০০০১৩০০, ০১৩২০০০১২৯৯ নম্বর অথবা নিকটস্থ থানা বা পুলিশ ইউনিট অথবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

‘মোখা’ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২ লাখ ৫০ হাজার সদস্য উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা, আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক দায়িত্ব পালন করছে তারা। ইতোমধ্যে হাতিয়া উপজেলার ২৫৫টি এবং সুবর্ণচর উপজেলার ১৫১টি আশ্রয় কেন্দ্রে আনসার ভিডিপি সদস্যদের সহায়তায় প্রায় ৩ লাখ দুর্গত মানুষকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের দেখাশোনা ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য ভিডিপি ইউনিয়ন লিডার ও আনসার কমান্ডারগণ তৎপর আছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় সাধারণ জনগণ, পোষা প্রাণী, ঘরবাড়ি, ফসল, মাছের ঘের, প্রাণিসম্পদ ও বেড়িবাঁধ রক্ষার্থে এবং জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট জেলা কমান্ড্যান্ট ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়কগণের প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতর থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনার আলোকে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং নিজ উদ্যোগে উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষকে সাহস জোগানো ও আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া সেন্ট মার্টিন, সন্দ্বীপ ও ভোলাসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলাগুলোতেও সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে একজন কমান্ডার/দলনেতার অধীনে ১০ জন করে ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব সদস্যের ছুটি স্থগিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইউনিয়ন/ওয়ার্ড দলনেতা ও দলনেত্রী, উপজেলা ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডারগণ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদেরকে মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া সদর দফতরের অপারেশনস কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সমন্বয় করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন দফতর ও সরকারি সংস্থা বা এজেন্সির কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের জন্য আনসার-ভিডিপির সদস্যরা কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। গত ১১ মে থেকে সচেতনতা সৃষ্টির এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একইভাবে গতকাল ১৩ মে চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলাসহ উপকূলবর্তী জেলাগুলোর ফায়ার স্টেশন থেকে গণসংযোগ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রচারণার কাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাসহ বিভাগীয় দফতরে খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। এসব মনিটরিং সেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, বিএসপি (বার), এনডিসি, পিএসসি, জি, এম ফিল মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উপকূলীয় এলাকাগুলোর ১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সবাইকে সতর্ক ডিউটিতে রাখা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা-সংক্রান্ত যে কোনো কাজে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। প্রয়োজনে পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেলে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ফায়ার স্টেশনগুলোতেও আশ্রয় নেওয়া যাবে। এ ছাড়া যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩-এ ফোন করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হলো। খবর : ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল। সীমান্তবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা পৌঁছে দিতে মাঠে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে যাচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফে আমার ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন এলাকায় ৫০০ সৈনিক মাঠে তৎপর। তারা প্রতিটি বাড়িতে যাচ্ছেন। এলাকাবাসীকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। তাদের সাইক্লোন শেল্টার বা নিকটবর্তী আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও বৈরী আবহাওয়ার সুযোগে সীমান্ত অপরাধ যাতে না বাড়ে, এর জন্য সীমান্তে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় যে কোনো প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য ০১৭৬৯৬০০৫৫৫ এবং ০১৮৮৯৬০০৫৫৫ দুটি টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে।

 

সর্বশেষ খবর