সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কথায় ও গানে সমরেশকে স্মরণ

কলকাতা প্রতিনিধি

কথায় ও গানে সমরেশকে স্মরণ

কথায় ও গানে স্মরণ করা হলো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকে। গতকাল সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার জিডি বিড়লা সভাঘরে আয়োজিত এ স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সমরেশের দুই মেয়ে দোয়েল মজুমদার ও পরমা মজুমদার, সমরেশের পুত্রসম প্রতিবেশী শুভদীপ রায়, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক গৌতম ঘোষ, অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দুলাল লাহিড়ী, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রূপা গাঙ্গুলী, খেয়ালী ঘোষ দস্তিদার, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়, কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, লেখক প্রচেত গুপ্ত, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব, সিপিআইএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী প্রমুখ। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দোয়েল মজুমদার বলেন, বাবার হৃদয়ে বাংলাদেশ ছিল। ভীষণ পছন্দ করতেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মিষ্টি বাবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। আসলে বাংলাদেশের মানুষের আত্মীয়তা এবং আত্মীয়তার কোনো তুলনা হয় না। এটা একমাত্র পৃথিবীতে ওই দেশেই পাওয়া যায়। তাছাড়া আমাদের ভাষাও তো এক। ফলে বাবার কাছে সব সময় বাংলাদেশ প্রিয় ছিল।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সমরেশ লেখালেখি শুরু করল এবং অল্প দিনের মধ্যেই এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। তার লেখা পড়লে বোঝা যেত যে কত সহজে মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারে। আসলে সাহিত্য তার কিছুই নয়, আসল বিষয় হলো কমিউনিকেশন’।

গৌতম ঘোষ তার স্মৃতিকথায় বলেন, ‘সমরেশ মজুমদার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু অসংখ্য মানুষের স্মৃতিতে যেখানে বাঙালি আছেন, বাংলা পাঠক রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ হোক বা বাংলাদেশ, নর্থ আমেরিকা সর্বত্র ওর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে ও অসংখ্য মানুষের স্মৃতিতে থেকে যাবে।’

অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় আমার দীর্ঘদিনের। অত্যন্ত সজ্জন, ভদ্রলোক রুচিসম্মত একজন মানুষ ছিলেন সমরেশ মজুমদার। তিনি ছিলেন আমাদের আড্ডার মধ্যমণি।’

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি অনেক ছোটবেলা থেকে সমরেশ দা’কে চিনতাম। আমার মায়ের সঙ্গে খুব ভালো, মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। আমরা ওদের বাড়িতে যেতাম। উনিও আমাদের বাড়িতে আসতেন’।

প্রয়াত সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো এবং গভীর সম্পর্ক ছিল নঈম নিজামের। সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ‘সমরেশদা যখনই ঢাকা যেতেন আমার অফিসে একবার যেতেন, আমাকে ফোন করতেন। সর্বশেষ যেদিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন তার দুই দিন আগেও আমাকে ফোনে বললেন, আমি ২ মে ঢাকা যাব। আমি তখন বললাম, আমি দেশের বাইরে থাকব আপনি ৮ তারিখের পরে আসুন। তিনি বললেন, ঠিক আছে। তার দুই দিন পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন এবং চলে গেলেন। একজন মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখন তিনি নেই। কিন্তু তার সাহিত্য, ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, রাজসিক পথচলা- সবকিছুই একজন সাহিত্যিক হিসেবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে তিনি ছিলেন অন্য উচ্চতার ব্যক্তিত্ব।’ আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে সমরেশ মজুমদারের লেখার ভক্ত ছিলেন। একজন মানুষ হিসেবে তিনি তার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। আসলে সমরেশ মজুমদার তার লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন’। অভিনেতা দুলাল লাহিড়ী বলেন, ‘সমরেশদা বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন, বাংলাদেশও তাকে ভালোবাসত। আর একে অপরের ভালোবাসা থেকে এক-একটা মিথ জন্ম নিয়েছে’। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে এদিন সমরেশের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টজনরা। কলকাতার ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাবের তরফেও ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর