বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে ডাকাতিতে অভিযুক্ত চার পুলিশ সদস্য

বিমানবন্দর এলাকা

মাহবুব মমতাজী

ওদের টার্গেট ছিল বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মালামাল লুট করা। এ জন্য মধ্যরাতে ঢাকার বিমানবন্দরের সামনের সড়কে মাইক্রোবাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ডাকাত দলটি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস এরা বিমানবন্দর এলাকায় তল্লাশির নামে মালামাল ডাকাতি করে আসছিল। আর এই চক্রটির নেতৃত্বে ছিলেন চার পুলিশ সদস্য। ঢাকা বিমানবন্দর থানা পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে তাদের নাম।

১ এপ্রিল রাত ১২টায় তল্লাশির নামে ডাকাতির খবর পেয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের সামনের সড়কে অভিযান চালায় বিমানবন্দর থানা পুলিশ। এ সময় রবিউল ব্যাপারী (২৭), আজাদ (২৪) ও উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ (২৫) নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি হাতকড়া ও লেজার লাইট জব্দ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই তিনজন পুলিশেরই কনস্টেবল। এরা মিরপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত। এ চক্রের আরেক সদস্য আবদুর রাজ্জাকও পুলিশ কনস্টেবল। তাদের ৭ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে তাদের মাইক্রোবাসের চালক জীবনও গ্রেফতার হন। ১১ এপ্রিল চক্রের আরেক সদস্য উবারচালক হীরু খানকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানা গেছে, গ্রেফতার ছয়জনই এখন কারাগারে। এদের মধ্যে রবিউলের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার নরারকান্দি গ্রামে, আজাদের বাড়ি দিনাজপুর সদরের মহাদেবপুর গ্রামে, উজ্জ্বলের বাড়ি লালমনিরহাটের মধুরাম গ্রামে এবং রাজ্জাকের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কুড়িপাড়া গ্রামে।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিঞা জানান, তাদের কাছে বেশ কিছুদিন কয়েকটি অভিযোগ আসে যে বিমানবন্দর এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এরপর তারা নজরদারি বাড়ান। গোপন সংবাদে তারা প্রথমে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিনজনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর জানা যায় আসামিরা পুলিশ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িত। এরপর আরও তিনজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া কনস্টেবলের মধ্যে উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এই চক্রে আর কারা কারা আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনার পরদিন ২ এপ্রিল মোট নয়জনের নাম উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ওই থানারই এসআই আহসান উল্লাহ।

মামলায় এসআই আহসান উল্লাহ জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার পর একটি মাইক্রোবাস দেখতে পান তিনি। তখন গাড়িতে অবস্থান করছিলেন কয়েকজন। আর বাকিরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের গাড়ি আসার পর গাড়িতে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা জানান, তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের যানবাহনের গতি রোধ করে তাদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও মালামাল ডাকাতি করে আসছেন।

৩ এপ্রিল বিমানবন্দর থানায় আরেকটি মামলা করেন জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সদরে। মামলায় তিনি বলেছেন, ১১ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে এমিরেটাস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় নামেন তিনি এবং তার বন্ধু দীন ইসলাম। দুবাই থেকে আসার সময় তাদের সঙ্গে দুটি করে চারটি সোনার বার ছিল। এসবের ওজন ৪৬৪ গ্রাম। এগুলোর শুল্ককরও পরিশোধ করেন তারা। এ ছাড়া ছয়টি করে মোট ১২টি ১৯৬ গ্রাম ওজনের চুড়ি আনেন তারা। এরপর রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় একটি সিএনজি ভাড়া করেন গুলিস্তানে যাওয়ার উদ্দেশে। রাত প্রায় ১২টায় বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্বপাশে বাবুস সালাম মসজিদ পার হয়ে কিছুদূর যেতেই সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস থেকে তাদের সিএনজিতে লেজার লাইট মারতে থাকে। এরপর পুলিশের পোশাক পরা তিনজন এবং সাদা পোশাকে দুজনসহ মোট পাঁচজন তাদের সিএনজির গতি রোধ করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের সিএনজি থেকে নামিয়ে গাড়িতে তোলে তারা। এরপর তাদের দুজনকে হ্যান্ডকাফ পরায় এবং গাড়ি পেছন থেকে একটি লুঙ্গি আর গামছা এনে চোখ বেঁধে ফেলে। তাদের পেট ও মাথায় পিস্তল তাক করে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। পরে তাদের মালামাল লুট করে ৩০০ ফুট সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায় ডাকাতরা।

সর্বশেষ খবর