বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমে ভালো নেই ওরা

রাশেদ হোসাইন

গরমে ভালো নেই ওরা

দুপুর ১২টা, তপ্ত দুপুরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। চলমান দাবদাহে মানুষের সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাণিকুলের জীবন। গরমে প্রাণীগুলোও হাঁসফাঁস করছে। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাঘ, সিংহ, ভল্লুক, বানরসহ প্রায় সব প্রাণী। খাঁচায় নির্দিষ্ট স্থানে রাখা পানির চৌবাচ্চায় ভিড় জমাচ্ছে সবাই। সুযোগ পেলেই নিজের শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছে। কিছু প্রাণী ছায়ায় অবস্থান করছে, কিছু পানিতে। প্রায় সব প্রাণীই একটু শান্তি পেতে সব রকম চেষ্টা করছে। তীব্র গরমে ঘণ্টাব্যাপী গোসল করছে হাতি রাজা বাহাদুর। শুঁড় দিয়ে শরীরে পানি ছিটাচ্ছে। কখনো মাথায় পানি দিচ্ছে, আবার কখনো ডানে-বামে। গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে এ চেষ্টা। পাশাপাশি পরিচর্যা কর্মীরাও মোটর দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে। এতে আরাম পেয়ে হাতি শুয়ে পড়ছে, আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এ যেন শান্তির পরশ। ছেদ পড়েনি বানরের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়ও। পানির হাউসকে কেন্দ্র করে খেলায় ব্যস্ত তারা। কেউ ওপর থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে। আবার কেউ পিছন থেকে টেনে ধরছে। গতকাল মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় এ চিত্র দেখা যায়। খাবারেও এসেছে পরিবর্তন। প্রাণীভেদে বিভিন্ন রকমের সুষম খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রাণীর খাওয়ার পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট বা স্যালাইন মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিটামিন সি দেওয়া হচ্ছে। হাতির খাবারেও প্রতিদিন ১০০ কেজি করে কলা গাছ দেওয়া হচ্ছে। গরমের ধকল কাটাতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি পরিচর্যা। উটপাখি ও ইমু পাখির ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিচর্যা নেওয়া হচ্ছে। ওষুধ মিশ্রিত স্যালাইন পানি খাওয়ানো হচ্ছে তাদেরও। বাঘ, সিংহ ও ভল্লুকের খাঁচায় দিনে দুবার পানি পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া তীব্র গরমে খাদ্য গ্রহণে প্রাণীগুলোর অনীহা সৃষ্টি হয়েছে, জানান খাদ্য সরবরাহে নিযুক্ত এক কর্মচারী। দুপুরে দেখা যায় বাঘ খাঁচায় পানির সামনে পায়চারি করছে। কিছুক্ষণ পর খাবার খেয়ে ভ্যাপসা গরমে হাঁপাতে থাকে। অনেক সময় হুঙ্কারও ছাড়ে। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছেন আনিসুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরমে প্রাণীগুলো নিজেদের মতো করে আছে। তাই তিনি ঠিকভাবে অনেক প্রাণীই দেখতে পারেননি। প্রাণীদেরও গরম লাগে। দূর থেকে যতটুকু দেখতে পেরেছি তাতেই ভালো লেগেছে। চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা শারমিন শিকদার ইমা বলেন, ‘আমরা অনেক প্রাণীর শেডের ওপরে গাছের ডাল দিয়ে দিয়েছি, যাতে গরম কম লাগে। একই কাজ করেছি পাখির খাঁচাতেও। আবার ফ্লোরে ভেজা চট বিছিয়ে দিয়েছি, যাতে গরম কম লাগে। পাখির খাঁচায় কিছুক্ষণ পর পর পানি স্প্রে করছি। আমাদের এখানে ৫টি হাতি রয়েছে। সময় করে এসব হাতিকে গোসল করানো হচ্ছে। গরমের কারণে দর্শনার্থী তুলনামূলক কম। ছুটির দিন দর্শনাথী বাড়ে। চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিদিন আমরা হাতিগুলোকে তিন বেলা করে গোসল করাচ্ছি। হাতির শরীরে পশম কম থাকায় বেশি পানি দেওয়া লাগে। চলমান তাপপ্রবাহ শুরুর আগেই আমরা প্রাণীদের ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া শুরু করি। বাড়তি যত্ন নেওয়া শুরু করেছি। আমরা নিয়মিত প্রাণীদের গোসল করাচ্ছি, কোনো কোনো দিনে তিনবারও করানো হচ্ছে। যেসব প্রাণীর সার্বক্ষণিক পানির ব্যবস্থা থাকে তারা নিজেরাই গোসল করে নেয়। সার্বক্ষণিক পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। যাতে কোনো প্রাণী প্রয়োজন অনুযায়ী পানি খেতে পারে। আবার দেখা যায়, পাত্রে পানি দিলে গরম হয়ে যায়। আমরা তা পাল্টে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। যাতে প্রাণীগুলো ঠান্ডা পানি পান করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা খাওয়ার পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট বা স্যালাইন মিশিয়ে দিচ্ছি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, কোনো কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিটামিন সি, হিটস্ট্রেস কমায় সে ধরনের মিনারেল মিশিয়ে দিচ্ছি। এ কাজ আমরা রুটিন মাফিক করছি। এতে প্রাণীগুলো এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর