ডিম, আলু ও পিঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পিঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারের এই দাম নির্ধারণের এক দিন পর গতকাল বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। নতুন দামের নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা পেলেও মানছে না কেউই। গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করা দামে আমরা কিনেও আনতে পারিনি, তাহলে ওই দামে বিক্রি করব কীভাবে। অন্যদিকে আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, গত এক মাসে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু।
ঢাকার রায়েরবাগ বাজারে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান পিঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পিঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী মো. শরীফ মাহমুদ বলেন, আলু ৪২ থেকে ৪৫ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি কীভাবে করব। আবদুল্লাহ নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘আলুর যে সিন্ডিকেট, ভোক্তা পর্যায়ে আসার আগেই দামের পাঁচটি স্তর রয়েছে। ৩০ টাকার আলু যদি এই পাঁচটি স্তরে ২ টাকা করেও লাভ করা হয়, তারপরও ১০ টাকা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে।’ শনির আখড়ার ডিম বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, খুচরা বাজারে তদারকি করার আগে পাইকারি বাজার এবং আড়তগুলোতে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি মনিটরিং করা প্রয়োজন। সবজির বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। ছোট বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও গাজর ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।চট্টগ্রাম : চলতি সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু। যদিও কৃষকের প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ টাকা। প্রতি কেজি ৮ টাকা লাভে কৃষক আলু সর্বোচ্চ ১৮ টাকায় বিক্রি করেছে। কয়েক হাত ঘুরে সে আলু খুচরা বাজারে আসতে আসতে হয়ে যাচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখন আলু কেনা যেন এক ধরনের বিলাসিতা।
বহদ্দারহাট-বাদুরতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি, যার কারণে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। ২ টাকা, ৫ টাকা করে আলুর দাম বেড়ে এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কেনা দামের চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা লাভে আমরা বিক্রি করছি। পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলে খুচরা বাজারেও দাম কমে যাবে। প্রথমে পাইকারি বাজারে নজর দিতে হবে। তাহলে খুচরা বাজারে অটোমেটিক দাম কমে যাবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এখন প্রয়োজন কীভাবে সরকার নির্ধারিত দামে ভোক্তার হাতে আলু পৌঁছানো যায় সে ব্যবস্থা করা। এজন্য প্রশাসনের তৎপরতা ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।