প্রভিডেন্ট ফান্ডে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অনেক বেশি বৈষম্য করা হয়েছে।
বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর নতুন করে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়কর মুক্ত। এ নিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বৈষম্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মীবান্ধব উদ্যোগ নিতে নিরুৎসাহি করবে।
নতুন আয়কর আইনে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর আরোপের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তবে কীভাবে কোন করবর্ষ থেকে এই আয়কর আদায় করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা আর দফতরে কাজ করেন প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। প্রজাতন্ত্রের এই কর্মকর্তা-র্কমচারীদের চাকরি শেষে অবসর ভাতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। পদের গ্রেড আর বেতন হিসেবে এই অবসর ভাতা নির্ধারিত হয়। কর্মীর অবর্তমানে তার পরিবারও এই পেনশন সুবিধা পায়। আছে ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ড। এর বাইরেও চাকরি শেষে এককালীন এক বছর ছয় মাসের মূল বেতন দেওয়া হয়। তা গ্রাচ্যুইটি বা আনুতোষিক ভাতা নামে পরিচিত। তবে এসব সুবিধার বেশির ভাগই পায় না বেসরকারি চাকরিজীবীরা।
আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ ¯েœহাশীষ বড়ুয়া বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে তহবিল আছে (প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন তহবিল) তা তারা সরকারি বিভিন্ন বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করেন। তাদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। কিন্তু আইনে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা হলো- সরকারি পেনশন তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। বেসরকারি খাতে কোনো কর অব্যাহতি না থাকলেও সরকারি খাতে কর অব্যাহতি আছে। তার মানে সরকারি চাকরিজীবীদের তহবিলে যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর কাটা হবে, তাই তাদের চূড়ান্ত কর। আর বেসরকারি খাতের পেশাজীবীদের আরও ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি দিতে হবে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। তাদের ঋণ সুবিধা থেকে শুরু করে বেতনও অনেক ভালো। কিন্তু বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তেমন কিছু নেই। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে যারা কাজ করে তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সেই অর্থে তেমন নেই। একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর আরোপ রীতিমতো বোঝা। এর ফলে প্রতিষ্ঠান সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসার যে প্রবণতা তা আরও কমে যাবে।