প্রবাসী নারায়ণ দাশের কেউ রইল না। বাসচাপায় প্রাণ হারান তার স্ত্রী রিতা রানী দাশ, বড় মেয়ে শ্রাবন্তী দাশ (১৭), ছোট মেয়ে বর্ষা দাশ (৯) এবং ৪ বছর বয়সী যমজ ছেলে দীপ দাশ ও দিগন্ত দাশ। এ সময় অন্য নিহতরা হলেন- রিতার ভাসুরের ছেলে বিপ্লব দাশ এবং ননদ চিনু বালা দাশ।
রিতা দাশের চাচা রিমন দাশ আহাজারি করতে করতে বলেন, মেয়েটার পুরো পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। ঘাতক বাস সবাইকে কেড়ে নিয়েছে। এখন কি করে স্ত্রী সন্তান ছাড়া তার স্বামী (নারায়ণ) বেঁচে থাকবে। কীভাবে মনকে সান্ত্বনা দেবে বিদেশে থেকে।
দাদির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার পথে ঘাতক বাসের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন রিতা দাশ, তার চার সন্তান ও ননদ। হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া এলাকায় গতকাল দুপুরে বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হন। জানা যায়, রিতা দাশের বাবার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার লালাং ইউনিয়নের শাহনগর এলাকায়। ১৫ দিন আগে রিতার দাদি মারা যান। দাদির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য সন্তান ও ননদ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চন্দনাইশ থেকে ফটিকছড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে ঘাতক বাস ওভারটেক করতে গিয়ে রিতা দাশদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রিতা দাশ, তার যমজ দুই সন্তানসহ চার সন্তান। রিতা দাশের শ্বশুরবাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায়। তার স্বামী নারায়ণ দাশ প্রবাসে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি চালক মো. রাশেদ বলেন, রিতা দাশদের বহনকারী সিএনজিটি চারিয়া বোর্ডস্কুল পার হতেই পেছন থেকে আরেকটি সিএনজি ধাক্কা দিলে উল্টাপথে ছেড়ে আসা দ্রুতগামী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি আদিল মাহমুদ বলেন, অটোরিকশাটি ভাটিয়ারী থেকে বড়দিঘির পার হয়ে ফটিকছড়ির দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ফটিকছড়ি থেকে চট্টগ্রাম শহরের দিকে যাচ্ছিল। সিএনজি অটোরিকশাটি চারিয়া বোর্ডস্কুল এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটি চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার সবাই নিহত হন। হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা বলেন, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সাতজনের লাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত তিনজনের মাথায় আঘাত রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।