বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোটে চরম অনীহা ভোটারদের

দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার ৩৭.৫৭ শতাংশ ♦ ইভিএমে ৩২.১৭ ও ব্যালটে পড়েছে ৩৮.৪৭ শতাংশ ♦ সর্বোচ্চ হার খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ৭৪.৯৫ শতাংশ ♦ সর্বনিম্ন রাজশাহীর বাগমারায় ১৭.৯৮ শতাংশ ♦ তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি ৪৩ উপজেলায়, পাঁচটিতে হাড্ডাহাড্ডি

গোলাম রাব্বানী

ভোটে চরম অনীহা ভোটারদের

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ছোট বউলের পাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না মঙ্গলবার পলাশবাড়ী উপজেলার ভোট গ্রহণ। তিনি বলেন, এ উপজেলায় ভোট হচ্ছে। কিন্তু  কোনো প্রার্থী ভোট চাইতেও আসেননি। এলাকায় কোথাও ভোটের আমেজও নেই। ভোটের দিন মঙ্গলবার গাইবান্ধা সদরের বাসিন্দা আসিফ ইকবালসহ আটজন মধ্যবয়সী বন্ধু দুপুরে আড্ডা দিচ্ছিলেন শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায়। তাদের কেউ ভোট দেননি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ভোট দেওয়া না দেওয়ার মধ্যে কিছুই ফারাক নেই। তাই আগ্রহ নেই ভোট দেওয়ার প্রতি। জেলা শহরে ভোটের আগের দিন পুলিশ বেশকিছু মোটরসাইকেল আটক করে। কিন্তু চালকদের দাবি, ভোটের কারণে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা কেউ জানেন না।

অন্যদিকে ভোট গ্রহণের দিন কুষ্টিয়ায় ভোটারের উপস্থিতির চিত্র ছিল হতাশাজনক। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নারী ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের ছয়টি বুথ ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বেলা ২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় কেন্দ্রের ৬ নম্বর বুথে মাত্র ছয়টি ভোট পড়েছিল। এর মধ্যে একটি ভোট দিয়েছেন এক প্রার্থীর এজেন্ট।

এই চিত্র শুধু গাইবান্ধা ও কুষ্টিয়ার নয়। দেশের বেশির ভাগ উপজেলায় ছিল ভোটারের ভাটা। ভোট দেওয়ায় অনীহা চরমে পৌঁছায় উপস্থিতির হার ছিল রেকড পরিমাণ কম। গত এক দশকে উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে। তাই ভোট গ্রহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে জেলায় জেলায়। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তবে সাভারে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৭.৫৭ শতাংশ। গতকাল এ ধাপের একীভূত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে। এ ধাপে সবচেয়ে ভোটের হার বেশি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৭৪. ৯৫ শতাংশ। সব থেকে কম ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোটের হার ১৭.৯৮ শতাংশ।

দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে বেড়েছে। ৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৬.১০ শতাংশ। মঙ্গলবার দেশের ১৫৬ উপজেলায় ব্যালট পেপার ও ইভিএমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়।

দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭টি উপজেলায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুই উপজেলায় তিনটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, মঙ্গলবার ১৫৬টি উপজেলায় নির্বাচন হলেও ৩টিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ওই তিনটির ফলাফল ইসি থেকে সমন্বয় করা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৩টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদের ফলাফল সমন্বয় করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ব্যালটে অনুষ্ঠিত ১২৯টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩৮.৪৭ শতাংশ। আর ইভিএমে অনুষ্ঠিত ২৩টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩২.১৭ শতাংশ।  ১৫৩টি উপজেলায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ জন তাদের ভোটাধিকর প্রয়োগ করেছেন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, ভোটের হার ৩০ শতাংশের বেশি হয়েছে। অবশ্য দুপুরেই নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, প্রথম ৪ ঘণ্টায় গড়ে ১৭% ভোট পড়েছে। দিন শেষে এ হার দ্বিগুণের বেশি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন তিনি।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতে, কম ভোটার উপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে একটা বড় রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে এবং জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ থাকতে পারে। তবে ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সংকটটা রাজনীতিতে। রাজনীতিতে যে সংকটটা রয়েছে, অবশ্যই একটা সময় কাটিয়ে ওঠা যাবে। সুস্থধারায় সামগ্রিক রাজনীতি প্রবাহিত হবে, ভোটাররা উৎসাহিত হবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে। ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা আছে।

সর্বশেষ খবর