পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। আর এসব বিক্ষোভে বারবার করে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ হচ্ছে। এমনকি বিক্ষোভকারীদের হাতে পাকিস্তানি পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকাও শোভা পাচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, জিও টিভি।
এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডেলে গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে একাধিকবার পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে এক পোস্টে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের পরিস্থিতির সরাসরি তুলনা টানে দলটি। শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে কখন কী ঘটেছিল? ১ জুলাই কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৬ জুলাই ছয়জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ তীব্রতর হয়। ১৮ জুলাই সরকার আতঙ্কিত হয়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় কিন্তু আন্দোলন থামেনি। এগুলোর সঙ্গে আপনি যদি পাকিস্তানের পরিস্থিতির কোনো মিল দেখতে পান, তবে তা কাকতালীয় নয়, বা পাকিস্তানে ঠিক একই পরিস্থিতি তৈরি হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই।’ আরেক পোস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সে সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ইমরান খান। তার ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডেল থেকে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, ‘বাঙালি জনগণ তাদের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে যেভাবে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা থেকে নিজেদের মুক্ত করেছে, তা প্রশংসনীয়। গোটা আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান যেভাবে অরাজনৈতিক থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন, তারও প্রশংসা করা উচিত।’ এদিকে বাংলাদেশের এসব ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পাকিস্তানজুড়ে সররকারবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেয় পিটিআইর ছাত্র সংগঠন ইনসাফ স্টুডেন্টস ফেডারেশন (আইএসএফ)। গত ৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয় তারা। সেই ভিডিও এক্সে শেয়ার করেছেন পিটিআই নেতা মাজ মালিক এবং ইমরান খানের মুখপাত্র সাহিবজাদা জাহাঙ্গীর। সেটি রিপোস্ট করা হয়েছে পিটিআইর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও। ইন্টারনেট বিভ্রাট : পাকিস্তানে ইন্টারনেট পরিষেবায় সম্প্রতি যে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে, তাতে সরকারের কোনো হাত নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী শাজা ফাতিমা খাজা। সেই সঙ্গে এই সমস্যার দায় দেশের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহারকারীদের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শপথ করে বলতে পারি যে, ইন্টারনেট পরিষেবার এই বিপর্যয় সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে ঘটেনি। সরকারিভাবে ইন্টারনেট ব্লক বা ধীরগতি করে দেওয়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আমরা সম্প্রতি এই সমস্যাটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, দেশে ভিপিএন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের ধীরগতির প্রধান কারণ এটি।’ উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট থেকে পাকিস্তানে ইন্টারনেট পরিষেবার বিভ্রাট শুরু হয়। দেশজুড়ে ইন্টারনেটের গতি ব্যাপকভাবে কমে গেছে, এমনকি কোনো কোনো অঞ্চল সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ডেটা উভয় পরিষেবাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে পাকিস্তান সরকার। রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের অংশ হিসেবে এমনটি করছে দেশটির সরকার বলে রয়েছে অভিযোগ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির ওপর। এতে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। মানবাধিকার কর্মীরাও তুলে ধরেছেন এর নেতিবাচক প্রভাব।