বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে গুম হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুই ভাই মিজানুর ও রেজাউল এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম মফিকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছেন দুই পরিবারের স্বজনরা। ১০ বছর আগে গুম হওয়া দুই পরিবার তিনজনের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। তাদের দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। এদিকে দুই ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবরে স্ট্রোক করে মারা গেছেন নিখোঁজ মিজানুর ও রেজাউলের মা। নিখোঁজ মিজানুর ও রেজাউলের বৃদ্ধ বাবা আইন-আল হক জানান, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট মুসলিমপুরের নিজ বাড়ি থেকে তার ছেলে মিজানুর রহমানকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যায় শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন ও শাহ আলমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে বড় ভাইকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তদবির করেন ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম। এরপর একই বছর ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহীর এস এস প্লাজা ছাত্রাবাস থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন দুই ভাই। অভিযোগ রয়েছে, রেজাউলের বিষয়ে পুলিশ থানায় জিডি নিলেও মিজানুরের ব্যাপারে জিডি নেয়নি পুলিশ। তারপরও আশা ছেড়ে দেয়নি পরিবার। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আইন-আল হক বলেন- আমি বৃদ্ধ বয়সে ছেলেদের মুখ দেখার জন্য বেঁচে আছি। অন্যদিকে মিজানুর রহমানের স্ত্রী বলেন, স্বামীর রেখে যাওয়া তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। আর সন্তানরা বাবার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। নিখোঁজ মিজানুর ও রেজাউলের বড় ভাই সেতাউর রহমান বলেন, দুই ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের মা স্ট্রোক করে মারা গেছেন এবং বৃদ্ধ বাবা দুই ছেলের জন্য অনবরত কান্নাকাটি করছেন। এদিকে ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় একই উপজেলার বালিয়াদিঘি গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম মফিকে। এরপর শিবগঞ্জ থানা পুলিশ সাধারণ ডায়েরি নিলেও উদ্ধার করতে পারেনি তাকে। মফিজুল ইসলামের স্ত্রী লাইলি বেগম বলেন, স্বামী নিখোঁজের পর থেকে র্যাব পুলিশের সব জায়গায় খোঁজ করেছি কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেনি। এমনকি স্বামীর সন্ধান চেয়ে তখন সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করতে পারিনি। এখন আমার তিন সন্তান তাদের বাবাকে উদ্ধারে রাস্তায় নেমেছে। তিনি তার স্বামীকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত চান। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবুল কালাম সাহিদ বলেন, যখন শিবগঞ্জের তিন ব্যক্তি নিখোঁজ হয়, তখন আমরা দায়িত্বে ছিলাম না। তাই বিষয়টি জানা নেই। তবে সেসময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা বিষয়টি বলতে পারবে।