মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। অথচ মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলের কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কে বিজয়ী হতে পারেন- তা কোনোভাবেই ধারণা করা যাচ্ছে না। জনমত জরিপে দুজনেই প্রায় সমান সমান রয়েছেন। যদিও শেষ খবর অনুযায়ী, মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমলা। তবে এই পয়েন্ট ঘনঘন ওঠানামাও করছে। এদিকে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই প্রার্থীর ভাগ্যই ঝুলছে অঙ্গরাজ্যগুলোর ফলাফলের ওপর। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে খবর পাওয়া গেছে, শ্বেতাঙ্গ নারী ভোটাররা হঠাৎ করেই কমলা হ্যারিসের দিকে ঝুঁকেছেন এবং হিসপ্যানিক পুরুষরা ঝুঁকেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে।
মার্কিন সংবিধানের অধীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব ভোট রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটর (নির্বাচক) থাকেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো- যিনি পপুলার ভোটে (সাধারণ নাগরিকদের ভোট) জিতবেন, তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন; সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যত কমই হোক না কেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে জয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো বড় প্রভাব রাখে। এ বছর দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা সাত।
আরেক খবর অনুযায়ী, যে হিসপ্যানিকদের সমর্থন ডেমোক্র্যাটরা বেশি পেয়ে এসেছে, এবার তা বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ঘুরে গেছে ট্রাম্পের দিকে। আবার যে শ্বেতাঙ্গদের সমর্থন রিপাবলিকানরা বেশি পেয়ে এসেছে, এবার তা নারীদের মধ্যে ঘুরে গেছে হ্যারিসের দিকে। এই শেষ সময়ে এসে পরিচালিত জরিপে হিসপ্যানিক পুরুষ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে সমর্থন বেশি পেতে দেখা যাচ্ছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আর শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে সমর্থন বেশি পাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। জরিপে দেখা গেছে, হিসপ্যানিক পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ সমর্থন। এর মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষ হ্যারিসের (৪৬ শতাংশ) সঙ্গে ট্রাম্পের সমর্থনের ব্যবধান নেমে এসেছে মাত্র ২ শতাংশ পয়েন্টে। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকানরাই সমর্থন বেশি পেয়ে এলেও এবার সেই সমর্থন ঘুরে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হ্যারিসের দিকে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। জরিপে দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে হ্যারিস পেয়েছেন ৪৬ শতাংশ সমর্থন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ সমর্থন। দুজনের মধ্যে ব্যবধান তিন পয়েন্ট। ফলে বলা যায়, দুজনের অবস্থান হাড্ডাহাড্ডি। রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত কয়েক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, নিবন্ধিত হিসপ্যানিক ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ সমর্থন, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ৩০ শতাংশ। আবার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও এবার ট্রাম্প পেয়েছেন ১৮ শতাংশ সমর্থন, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ১৪ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভোটারদের উদ্দেশে তাদের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেছেন। কমলা হ্যারিস তার বক্তব্য এমন স্থানে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় চার বছর আগে ক্যাপিটল দাঙ্গার ঠিক আগে আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও বক্তব্য রেখেছিলেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ার অ্যালেন্টাউনে একটি প্রচারণা সমাবেশ করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, যেটির ফলাফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্রাম্প তার ভাষণ শুরু করেন একটি সহজ প্রশ্ন দিয়ে। ভোটারদের তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘চার বছর আগের তুলনায় আপনি কি এখন ভালো অবস্থায় আছেন? এরপর একে একে তিনি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো পুনরাবৃত্তি করেন। সেগুলোর মাঝে রয়েছে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। তিনিও কমলা হ্যারিসের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘কমলা আমাদের লজ্জিত করেপ্রণ। তার মাঝে নেতৃত্বের যোগ্যতা নেই।’ এরপর তিনি পেনসিলভেনিয়ার ল্যাঙ্কাস্টার কাউন্টির একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেখানকার কর্মকর্তারা এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন যে, তারা ভোটার নিবন্ধন ফর্ম তদন্ত করছেন, যা জাল হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যদিও নির্বাচনি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে কাউন্টির নির্বাচন সুরক্ষিত রয়েছে এবং সন্দেহভাজন প্রতারণার বিষয়টি চিহ্নিত করা তাদের ‘সিস্টেমের কার্যকারিতার’ একটি লক্ষণ।
কমলা বলেন, ৯০ দিনেরও কম সময় (২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের, পেছনে হোয়াইট হাউস দেখিয়ে) আছে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা আমি ওভাল অফিসে বসি তাহলে প্রথমদিনেই ট্রাম্প তার শত্রুদের নির্মূলের পদক্ষেপ নেবেন। অপরদিকে আমি আমেরিকানদের সামগ্রিক কল্যাণের অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজ শুরু করব। কারণ, আমি দল অথবা ব্যক্তিস্বার্থে বিশ্বাস করি না। আমি দলের নেতা হতে চাই না, সব জনগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট হতে চাই। ডেমক্র্যাট, রিপাবলিকান-সবাইকে নিয়ে সাজাব মন্ত্রিপরিষদ। কমলা বলেন, ট্রাম্প যদি আবারও প্রেসিডেন্ট হতে পারেন তবে বিত্তশালীদের ট্যাক্স আরও কমাবেন, অপরদিকে, তিনি বিজয়ী হলে নিম্ন ও মাঝারি আয়ের আমেরিকানদের ট্যাক্স ক্রেডিট দেবেন এবং বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আমেরিকানদের ২৫ হাজার ডলারের মঞ্জুরি দেবেন ডাউন পেমেন্টে সহায়তার জন্য।
আগাম ভোটে দীর্ঘ লাইন : নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, টেক্সাস, জর্জিয়া, মিশিগানসহ সব স্টেটে আগাম ভোটের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। বুধবার ভোর ৬টায় প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সোয়া ৫ কোটি আগাম ভোট পড়েছে। সবচেয়ে বেশি আগাম ভোট টেক্সাসে-৫৯ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৯। এরপরই রয়েছে ফ্লোরিডা-৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৯। আগাম ভোটের ব্যাপারটি কমলা এবং ট্রাম্প-উভয়কেই স্বস্তি দিচ্ছে। কারণ, চূড়ান্ত ভোটের দিন ৫ নভেম্বর সবাই একই সঙ্গে কেন্দ্রে গেলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ত।