বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে বঞ্চিতরা পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। এ নিয়ে গঠিত কমিটিতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। গত এক মাসে শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিগত সরকারের আমলে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে আবেদন করেছেন। আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইবাছাই করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সুপার নিউমারি পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের পদোন্নতি এবারই প্রথম বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সুপার নিউমারি পদ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত তৈরি করা পদ।
এ লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সংসদ সচিবালয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় অতিরিক্ত সচিব খান মো. নুরুল আমিনকে। সদস্য হিসেবে আছেন যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সামসউদ্দীন খালেদ এবং যুগ্মসচিব ফয়সাল মোর্শেদ আছেন সদস্যসচিব হিসেবে। এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে সচিব ও বিভিন্ন উইং প্রধানদের কাছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে আবেদন জমা দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংসদসচিব বঞ্চিতদের আবেদন যাচাইবাছাই করতে ওই কমিটি গঠন করেন। অনেকে এটাকে নজিরবিহীন উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ১ হাজার ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত। জানা গেছে, বেশির ভাগ আবেদনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের পদোন্নতিবঞ্চিত দাবি করেছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন, তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তাদের অভিযোগ, বিগত ১৫ বছরে সংসদ সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ব্যক্তিদেরই কেবল পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যারা সচিবালয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন তারা ঠিক করতেন কাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। প্রতিটি নিয়োগে একাধিক আওয়ামী ভিআইপিদের সুপারিশ ও তদবির ছিল। এসব নিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনও হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিগত ১৫ বছর রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা সংসদ সচিবালয়ের পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন তাদের আবেদনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে কমিটির তিন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এখন যারা আবেদন করছেন তাদের পদোন্নতি হবে বিশেষ বিবেচনায়। তবে কতজনকে পদোন্নতি দেওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কমিটি সবার আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করবে। জানা যায়, বিগত সরকারের স্পিকার ও সিনিয়র সচিবের কাছে একাধিকবার আবেদন করা সহকারী এস্টেট অফিসার একরামুল হক তার আবেদনে লেখেন- ‘১৯৯৮ সালে চাকরিতে যোগদান করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৬ বছর চাকরিকালে যেখানে কমপক্ষে চারটি পদোন্নতি পাওয়ার কথা পদোন্নতির পদে আত্তীকরণের ফলে সেখানে একটি মাত্র পদোন্নতি পেয়েছি। আমার ব্যাচমেটরা পরিচালক (আইন), উপপরিচালক (প্রকাশনা), সহকারী পরিচালক (বিতর্ক সম্পাদনা), প্রটোকল অফিসার ইত্যাদি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ হতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথমস্থান অধিকার করেও দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছি। ফলে পরিবার ও সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। কারও কাছে বঞ্চনার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। এ বঞ্চনার অবসান হওয়া জরুরি বলে মনে করি। সদাশয় কর্তৃপক্ষ সদয় বিবেচনা করে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতাসহ সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি দিলে সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হব।’ এসব আবেদন প্রসঙ্গে কমিটির সদস্যসচিব ফয়সাল মোর্শেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আবেদনগুলো যাচাইবাছাই করব। যেগুলো বিবেচনার যোগ্য সেসবের তালিকা তৈরি করে সচিবের কাছে পাঠানো হবে। তিনি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’ এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা একটা কঠিন কাজ। তারপরও পথ তো বের করতে হবে। একটা লোক যদি পদোন্নতি না পায় তাহলে সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত বছরগুলোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার পাশাপাশি নিয়োগবিধিও ওলটপালট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। যেহেতু উপদেষ্টা সাহেব স্পিকারের দায়িত্বে আছেন তাই সুপার নিউমারি পদ্ধতিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে। অনেকের চাকরি বেশি দিন নেই। তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এতে সরকারের খুব একটা আর্থিক ক্ষতি হবে না। আরেকটি সুবিধা হলো-এখন আমাদের কমিশন আছে। এর প্রধান আইন উপদেষ্টা। তাই এসব আর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে না। কমিশনই পদোন্নতি বা পদ সৃষ্টি করতে পারবে।’