চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস) নিয়ে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী দেশের সব বন্দরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। এর মধ্যেই গত শনিবার চলতি বছর প্রথমবারের মতো দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো ফ্লুর উপসর্গ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। সম্প্রতি চীন ও অন্যান্য দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, দেশের সব বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সব বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘এ ভাইরাস আমাদের দেশে নতুন নয়। এর আগেও দেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে মহামারির কোনো শঙ্কা নেই, সীমান্তে সতর্কতা জারি করাও জরুরি নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তবে এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি। ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ ফ্লুর কারণ হিসেবে এ ভাইরাস সারা দুনিয়ায় শনাক্ত হচ্ছে, আমাদের এখানেও হচ্ছে। এটিকে এখনো পর্যন্ত প্রাণঘাতী হিসেবে বলা হচ্ছে না। ভাইরাস যখন সার্কুলেশনে থাকে মিউটেশনের শঙ্কা থাকে। সেটি নজরদারির মধ্যে আছে।’ এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইনস ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিশেষ ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারও মধ্যে এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে। আরও বলা হয়েছে, দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমাদের প্রতিনিধিরা জানান- বেনাপোল, ভোমরা, আখাউড়া, সোনামসজিদ, হিলি বন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেনাপোল প্রতিনিধি বকুল মাহবুব জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশনে সতর্কতা জারি হয়েছে। ওসি আহসানুল কাদের ভূঁইয়া জানান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারীদের কেউ আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করছে ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি জানান, সতর্কতা হিসেবে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে ভোমরা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে। ভোমরা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের মেডিকেল টিমের ইনচার্জ ডা. আবদুস শহিদ জানান, পাসপোর্টধারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মাস্ক পরা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান, সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো. রফিকুল আলম জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে মেডিকেল টিম ও স্ক্রিনিং টিম গঠন করে কাজ শুরু করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. কামাল হোসেন জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দুটি মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বেলাল জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ডেস্ক চালু করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে একটি অস্থায়ী মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’ দিনাজপুর প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম জানান, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। হাকিমপুর উপজেলা হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এ টিম কার্যক্রম শুরু করেছে।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইলতুতমিশ আকন্দ জানান, ভারত থেকে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল টিম ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করছে। সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নবেল জানান, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দরসহ বন্দরে বাড়তি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, এইচএমপিভি সংক্রমণের জন্য এখনো সিলেট বিশেষ কোনো ঝুঁকিতে নেই। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা সতর্কবার্তা এসেছে। তবে এখনো সিলেটের বিমানবন্দর কিংবা কোনো স্থলবন্দর, শুল্ক স্টেশন কিংবা ইমিগ্রেশন সেন্টারে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।