টানা পঞ্চম দিনের মতো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। ফিরে যাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী। বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা এবং অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের।
চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে এমন অচলাবস্থা চলছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। অনেকেই সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের জন্য যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের কষ্ট যেন আরও বেশি। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চিকিৎসার মাঝপথে থাকা রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতাল থেকে বাকি চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের কেউ আসেননি। তবে রোগীরা ঠিকই এসেছেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। অনেকে কী করবেন বুঝতে না পেরে অপেক্ষা করছেন। ২৫০ শয্যার বিশেষায়িত এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেবা চালু অবস্থায় জরুরি ও সাধারণ বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি অস্ত্রোপচার করা হয় এখানে। আর বহির্বিভাগসহ প্রতিদিন এ হাসপাতাল থেকে ৩ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। পাঁচ দিন ধরে সব সেবা বন্ধ আছে।
রংপুর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত শনিবার আমার স্ত্রীর চোখের অপারেশন হয়েছে। আজ ফলোআপের তারিখ ছিল। এ জন্য গতকাল রাতে রওনা হয়ে সকালে হাসপাতালের সামনে এসেছি। কিন্তু এসে দেখছি হাসপাতাল বন্ধ। এখন চোখের চিকিৎসার কী হবে? এরকম অসুস্থ মানুষ নিয়ে এতটা পথ আমি কীভাবে ফিরে যাব? হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, বর্তমানে এখানে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী আছেন ৬০-৭০ জন। মারামারি-সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালটিতে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা কেউ আসছেন না। সকাল ৭টার পর থেকে অনেক রোগী এসে ফিরে গেছেন। তাঁদের কেউ নতুন রোগী। কেউ বা আগে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এখন আবার চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন। আবার অনেকের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ। অচলাবস্থা নিরসনে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিনিধিরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্য সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই চিকিৎসাসেবা আবার শুরু করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী বন্দোবস্ত হিসেবে রোগীদের কাছের কোনো হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ২৯ মে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খোরশেদ আলম আহ্বায়ক, একই বিভাগের উপসচিব শাহাদাত হোসেন রাকিবকে সদস্য সচিব এবং সদস্য করা হয়েছে জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও পরিচালক পর্যায়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধিকে।