বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে যান তিনি। এ সময় বিএনপি মহাসচিব জানান, তারেক রহমানের নির্দেশেই জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। মির্জা ফখরুল হাসপাতালে পৌঁছে কিছু সময় জামায়াত আমিরের শয্যাপাশে কাটান। এ সময় জামায়াত আমিরকে তিনি জানান, তারেক রহমান আমিরের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছেন মির্জা ফখরুলকে। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মাধ্যমে জামায়াত আমিরের খোঁজ নিয়েছেন। এর আগে বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখান থেকে সরাসরি তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডা. শফিকুর রহমানের বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গরমের কারণে ডা. শফিকুর রহমানের মাথা ঘুরে ওঠে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘সিনকোপাল অ্যাটাক’। অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক সময় সিনকোপাল অ্যাটাক হয়। এখন তিনি স্বাভাবিক আছেন। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না তা দেখার জন্য আরও কিছু টেস্ট করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন। এদিকে রাত ৯টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে হেঁটে বের হয়ে বাসায় ফেরেন।
এর আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ৫টার পর বক্তব্য শুরু করেন জামায়াত আমির। ৫টা ২০ মিনিটের দিকে প্রথমবার অসুস্থ হলে নিচে পড়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর মঞ্চের অন্য নেতাদের সহযোগিতায় তিনি উঠে দাঁড়ান। ৫টা ২৩ মিনিটে আবার বক্তব্য শুরু করেন তিনি। ১ মিনিট বক্তব্য না দিতেই ফের অসুস্থ বোধ করলে কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা বন্ধ করেন। এ সময় অন্য নেতারা চারপাশ থেকে তাকে ধরে বসিয়ে দেন। বসা অবস্থায়ই বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি। বক্তৃতা শেষে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
জামায়াত আমিরের খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা : জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রাতে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব গণমাধ্যমকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত আমিরের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখানে আসার আগে আমি ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) হয়ে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেছি।
জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস : জামায়াত আমির রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশ্রামের জন্য বাসায় এসেছি। আমার এ সাময়িক অসুস্থতার কারণে আজকের সমাবেশে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি আমার ইচ্ছাকৃত নয়। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো কল্যাণ রেখেছেন। অসুস্থ হওয়ার পরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশ-বিদেশে অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন ও দোয়া করেছেন।
হাসপাতালে স্বল্প সময়ে থাকাকালীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদসহ একটি টিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের এবং খেলাফত মজলিসের অন্যতম সিনিয়র নেতা আহমদ আলী কাসেমী, খেলাফত আন্দোলন, এনসিপি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতারাও খোঁজখবর নিয়েছেন। দেশ-বিদেশে অসংখ্য সহকর্মী, শুভাকাক্সক্ষী, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, এমনকি বাংলাদেশিদের বাইরেও অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাসহ আরও অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তাদের সবার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।