গোপালগঞ্জে কারফিউ শিথিল করায় সড়কে রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন অল্প পরিসরে চলেছে। তবে ব্যবসায়ীদের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় গতকাল বেশির ভাগ দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। স্থানীয় মাছ, মাংস, কাঁচাবাজার, ফার্মেসি ও পাড়ামহল্লার মুদি দোকান ছিল খোলা। অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী ছিল কম। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের নিরাপত্তায় রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর টহল। প্রতিটি বাহিনী রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলমান কারফিউ শিথিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান। পরে বিকালে আবার কারফিউর সময় বাড়িয়ে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ করা হয়। এদিকে বিপ্লবীদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সমাবেশে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় নতুন আরেকটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন পুলিশের এসআই শামিম আল মামুন। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার সদর উপজেলার সাতপাড় এলাকায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা, গাড়ি ভাঙচুর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মোট দুটি মামলা করে। এর মধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সমাবেশে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় গোপালগঞ্জের পাঁচ থানায় বিভিন্ন মামলায় মোট ৩ হাজার আটজনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে হামলা-সংঘর্ষে গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহত টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা মোল্লার পরিবার কোনো মামলা করবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নিহতের মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার জানিয়েছেন। হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনের নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন জেলা শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহা (২৫), শহরের থানাপাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার আড়পাড়ার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা মোল্লা (৩৫) এবং গোপালগঞ্জ শহরের থানাপাড়ার রিকশাচালক রমজান মুন্সি (৩৫)। তারা সবাই এনসিপির সমাবেশ কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে ভিকটিমের পরিবার নিশ্চিত করেছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহত পরিবারের কেউ মামলা করতে থানায় আসেনি। মামলা করতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলার পাইককান্দি গ্রামের মঈন সিকদার বলেন, ‘কারফিউ শিথিল হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা তিন দিন যাবৎ একটানা ঘরে বসা ছিলাম। সাধারণ মানুষের জন্য কারফিউ না থাকাটাই সবচেয়ে ভালো।’