চট্টগ্রামের সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের দুটি অকেজো জাহাজ এক যুগের বেশি সময় ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে মৎস্য অধিদপ্তর। ‘আর ভি অনুসন্ধানী’ ও ‘আর ভি মাছরাঙা’ জাহাজ পাহারায় গত ২৮ বছরে সরকারের খরচ হয়েছে কোটি টাকার বেশি। আশার খবর হলো, জাহাজ দুটি বিক্রির জন্য সম্প্রতি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করেও মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় জাহাজগুলো নিয়ে কোনো কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য অধিদপ্তর আর ভি অনুসন্ধানী ও আর ভি মাছরাঙা নিয়ে একসময় সাগরে মাছের জরিপ পরিচালনা করত। ১৯৯৭ সালের পর আর ভি মাছরাঙা এবং আর ভি অনুসন্ধানী ২০০১ সাল থেকে আর ব্যবহৃত হয়নি। যথাক্রমে ৯ ও ১৩ বছর ফেলে রাখার পর ২০১০ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাহাজ দুটি অকেজো ঘোষণা করে ও নিলামে বিক্রি করতে বলে। প্রায় ১৫ বছর হতে চললেও জাহাজ দুটি বিক্রি করতে পারেনি মৎস্য অধিদপ্তর। সরকারের মোটরযান, নৌযান, কম্পিউটার ও অফিসে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্রপাতি অকেজো ঘোষণা ও নিষ্পত্তির নীতিমালা অনুযায়ী অকেজো ঘোষিত নৌযান-হালবডি-ইঞ্জিন শিল্ড টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) নীতিমালা অনুযায়ী ১৯৯৭ সাল থেকে আর ভি মাছরাঙা ও ২০০১ সাল থেকে আর ভি অনুসন্ধানী জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ যথাক্রমে দৈনিক ১ হাজার ও ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে যথাক্রমে ২৮ ও ২৪ বছরে চট্টগ্রাম মৎস্যবন্দরকে ২৩ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালের অডিট রিপোর্টের তথ্যানুসারে একই বছর ২ লাখ টাকার বেশি ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ১ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। জাহাজ সংরক্ষণে নিয়মিত দায়িত্ব পালন বাবদ ১১ ডেকহ্যান্ড শ্রমিক ও তিনজন স্থায়ী কর্মচারীর পেছনে সর্বশেষ দুই অর্থবছরে ১২ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে দুটি জাহাজ পাহারায় সরকারের খরচ হয়েছে ২৩ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকার দুটি জাহাজের দাম ৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। দীর্ঘ সময় অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় জাহাজ দুটি ভাঙারিতে পরিণত হয়েছে। আর ভি অনুসন্ধানী কিছুটা ভালো থাকলেও মাছরাঙার ৭০ শতাংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। তাই নিলামে কোনো কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ২৮ বছরে এ জাহাজের পেছনে যে অর্থ খরচ হয়েছে জাহাজগুলো বিক্রি হলেও সে টাকা উঠবে না।
জানতে চাইলে সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক ড. মঈন উদ্দিন আহমদ জাহাজের খরচসংক্রান্ত কোনো বিষয় জানেন না বলে দাবি করেন। তবে সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলা জটিলতায় জাহাজগুলো বিক্রি করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। তবে ২০২৪-এর মাঝামাঝি মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএফডিসিকে এক বছর যাবৎ ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না।’