অবশেষে দূর হচ্ছে বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের সাক্ষাতের ভোগান্তি। থাকছে না আর কোনো দালালের দৌরাত্ম্য। কারাবন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎ হবে এবার লাইভ ভিডিওতে। তাও আবার ঘরে বসেই। মাত্র ৩০ টাকা ফি-তে এ সুবিধা শিগগিরই চালু করতে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। আপাতত কাশিমপুর-১ কেন্দ্রীয় কারাগার দিয়ে এর যাত্রা শুরু হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারা সূত্র।
কারা সূত্র জানায়, সাবেক একজন বন্দির প্রস্তাব থেকেই এ উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সাবেক ওই বন্দি একজন প্রোগ্রামার ছিলেন। তার নিজের অভিজ্ঞতা এবং কারিগরি জ্ঞানের সম্মিলিত প্রস্তাব তুলে ধরেন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। বিষয়টি আমলে নেন খোদ কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন। পরবর্তীতে কয়েকটি অ্যাপস ডেভেলপিং ফার্মের সঙ্গেও আলোচনায় বসে কারা সদর দপ্তর। সবশেষ একটি অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট ফার্মকে দিয়ে বিশেষায়িত এ অ্যাপসটি তৈরি করা হয়। খুব শিগগিরই তা যাত্রা শুরু হবে কাশিমপুর-১ কেন্দ্রীয় কারাগারে।
সূত্র আরও জানায়, বিশেষায়িত এ অ্যাপসটির জন্য এখনো কোনো বিনিয়োগ করছে না কারা সদর দপ্তর। ডেভেলপিং ফার্ম উদ্ভাবিত এ ব্যবস্থাটি ভালোভাবে কাজ করলে সেখান থেকে অর্জিত অর্থ দিয়েই তাদের খরচ পরিশোধ করা হবে এমন চুক্তি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ নিয়ে আর্থিক লেনদেনসহ নানা রকমের ভোগান্তির বিষয়টি একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এলেও রহস্যজনক কারণে তাতে কর্ণপাত করেনি সরকার। কেবল সাক্ষাৎ থেকেই অবৈধ লেনদেনে ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন দুর্নীতিবাজ কারা স্টাফরা। এ অর্থের বড় একটি অংশ যেত ওপর মহলে। এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অ্যাপসটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত করে ফেলেছে ডেভেলপিং ফার্ম। এখন আমরা কাশিমপুর-১ এর বন্দিদের ডাটা নিচ্ছি। আশা করছি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তা চালু করতে পারব। এতে করে সাক্ষাৎকেন্দ্রিক ভোগান্তির লাঘব হবে স্বজনদের। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে এ আইডিয়াটি ছিল একজন সাবেক বন্দির। কারাগারে থাকার সময় তার নিজের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছে। এরপরই আমরা এ উদ্যোগ নিই। দেখা যাক, শুরুটা ভালো হলে আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাগারে চালু করব।
যেভাবে কাজ করবে এ অ্যাপস : কারাগারের প্রত্যেক বন্দিকে একটি করে ইউজার আইডি দেওয়া হবে। ওই আইডি নম্বরের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে ঘরে বসেই সাক্ষাতের স্লট বুক করতে হবে স্বজনদের। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নিশ্চিত করবে বিশেষায়িত এ অ্যাপস। পরবর্তীতে বারকোডের মাধ্যমে বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করবে অ্যাপসটি। কারা কর্তৃপক্ষ তা জানিয়ে দেবে বন্দিকে। এর বাইরেও কারাগারের অভ্যন্তরে ডিসপ্লে বোর্ড থেকে বন্দিরাও জানতে পারবেন কখন তার স্বজন অনলাইনে আসবেন দেখা করতে। অন্যদিকে, অ্যাপয়েনমেন্ট কখন শুরু হবে সে বিয়ষটিও বন্দির স্বজনকে আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে। কাঙ্ক্ষিত সেই দিন বন্দিদের কারাগারের একটি কক্ষে নিয়ে কথা বলিয়ে দেবে কারা কর্তৃপক্ষ। একটানা ৩০ মিনিট বন্দির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন তার স্বজনরা।