ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০টি নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদের ২৬১টি আসনের সীমানা বহাল রেখে বাকি ৩৯টি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
এবার গাজীপুর জেলায় ১টি আসন বাড়িয়ে বাগেরহাট জেলায় ১টি আসন কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে। এদিকে ৩৯টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করলেও শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত হয়, আর ৩০০টি আসনের চূড়ান্ত সীমানা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাস।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৩০০টি আসনের সীমানা নিয়ে দাবি ও আপত্তি জানানোর জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছে নির্বাচন কমিশন। দাবি আপত্তি গ্রহণের পর শুনানি করে ৩০০ নির্বাচনি এলাকার সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করতে এক মাস সময় লাগবে।
অন্যদিকে ৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশের পরদিন বৃহস্পতিবার থেকেই আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনও শুরু করেছেন সংক্ষুব্ধরা। বিলুপ্ত বাগেরহাট-৪ আসন বহাল রাখার দাবি জানিয়ে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন বিএনপি নেতারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলাকে দুই সংসদীয় আসনে বিভক্ত না করে আগের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে রাখার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছে ইসির কাছে। বৃহস্পতিবার বিজয়নগর সাধারণ জনগণের পক্ষে-গোলাম মোস্তফা সুমন, মোজাহিদুজ্জামান চৌধুরী, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী, এ কে এম গোলাম মুহীত ওসমানী, মো. বায়েজিদ মিয়া, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আবেদন জমা দেওয়া হয়।
বাগেরহাট-৪ আসন বিলুপ্ত না করে বহাল রাখার দাবি জানান তাঁতী দল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনির। তিনি সিইসির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন। এবার সীমানা পুনর্নির্ধারণে যে এক ডজন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে- পার্বত্য এলাকার ৩ (তিন) জেলার ৩টি আসন অপরিবর্তনীয় রাখা; ২ (দুই) আসনবিশিষ্ট জেলার আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা; কারণ ভোটার/জনসংখ্যার অনুপাতে আসন বৃদ্ধি করলে অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস (জেলাভিত্তিক ভোটারের জাতীয় গড়ের তুলনায়) পায়। আবার ২টি আসন-কে ১টি আসনে হ্রাস করলে ভোটার সংখ্যা গড়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়; ৩ (তিন) আসনবিশিষ্ট জেলার আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা। আসন হ্রাস/বৃদ্ধিতে ভোটার/জনসংখ্যার অনুপাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে; যেসব আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য কোনো আবেদন দাখিল হয়নি সে আসনগুলো অপরিবর্তিত রাখা; প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার গণ্যে উপজেলা/থানা ইউনিটকে যতদূর সম্ভব অখণ্ড রাখা; জেলার মধ্যকার আসনের ভোটার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০% ব্যবধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; যতদূর সম্ভব, প্রশাসনিক ও নির্বাচনি সুব্যবস্থার বিষয় বিবেচনায় রেখে উপজেলা, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের অখণ্ডতা বজায় রাখা; ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও পৌরসভার একাধিক সংসদীয় আসনের মধ্যে বিভাজন না করা; সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, প্রশাসনিক পরিধি বিবেচনায় নির্বাচনি এলাকা পুনর্বিন্যাস করা; যতদূর সম্ভব সীমানা পুনর্নির্ধারণকালে সংশ্লিষ্ট জনগণের সেবা বিষয়ক সুবিধা/অসুবিধার বিষয় বিবেচনা করা; যতদূর সম্ভব ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য (যথা-নদী) ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (যথা-রাস্তাঘাট) তথা জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনা করা এবং যেসব প্রশাসনিক এলাকা নতুন সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত/কর্তন করা এবং পরিবর্তিত নাম সংশোধন করা। কোনো সংক্ষুব্ধ বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ১০ আগস্টের মধ্যে কোনো আসনের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনি এলাকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পেশ করতে পারবেন। বুধবার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করেছি ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে ওপরের জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। বাকিগুলোয় আসন কমবেশি প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর এবার সীমানা নির্ধারণে বিশেষায়িত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। এরপরই সব দিক বিবেচনা করে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরি লোকদের এখানে কাজে লাগানো হয়েছে, তারা নিশ্চয়ই সবকিছু নিখুঁতভাবে করেছেন। সীমানা নির্ধারণ করতে বড় বিষয়-ভোটার সংখ্যার সমতা দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে ইসি মোটামুটিভাবে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করেছে। খুব বেশি ভ্যারিয়েশন নেই। ২টি জেলায় বেড়েছে-কমেছে। গাজীপুরে ভোটার ও জনসংখ্যা দুই বেশি। দুই জেলাতেই ভোটার সংখ্যার সমতা দেখা হয়েছে। ওভারঅল এই পুনর্নির্ধারণ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।