ফিলিস্তিনের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসের হাসপাতালে গতকাল ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীসহ আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। নিহত পাঁচ সাংবাদিকের মধ্যে আছেন রয়টার্সের আলোকচিত্রী হুসাম আল-মাসরি, এপির ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মারিয়াম দাগ্গা, আলজাজিরা ও মিডল ইস্ট আই-এর সাংবাদিক মোহাম্মদ সালামা, মিডল ইস্ট আইয়ের আহমাদ আবু আজিজ ও ফটোগ্রাফার মোয়াজ আবু তাহা। ইসরায়েলি হামলায় নিজেদের সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় রয়টার্স, মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা শোক প্রকাশ করেছে। এদিকে, সাংবাদিক প্রাণহানির ঘটনায় দ্য ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অবিলম্বে ব্যাখ্যা চেয়েছে। গতকাল এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। অপরদিকে, হাসপাতালে হামলার কথা স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তারা হামলা চালায় না বলেও আইডিএফের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর এক টার্গেটেড হামলায় ছয় সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে চারজনই ছিলেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সংবাদকর্মী। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস তখন এক বিবৃতিতে এ হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছিল। ওই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটল।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় হাসপাতালে ২০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক এবং সিভিল ডিফেন্সের একজন সদস্য রয়েছেন। গাজার খান ইউনিসের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নাসের হাসপাতালে ওই হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একাধিকবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে হাসপাতালটি।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের দুই বছরে গাজা উপত্যকায় প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গতকাল খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল এলাকায় হামলা চালিয়েছেন ইসরায়েলি সৈন্যরা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়নি বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
আলজাজিরার একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সংঘটিত এই ভয়াবহ অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই। ইসরায়েলি বাহিনী সাংবাদিকদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করেছে; যা সত্যকে স্তব্ধ করার পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ।’ এপি এক বিবৃতিতে বলেছে, হামলায় এপির ৩৩ বছর বয়সি ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক মারিয়াম দাগ্গা নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের শুরু থেকে সংস্থাটির হয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। আর রয়টার্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা রয়টার্সের কন্ট্রাক্টর হুসাম আল-মাসরির প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। হামলায় আরেক কন্ট্রাক্টর হাতেম খালেদ আহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, এএফপি।