শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে অংশীজনদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাতটি কলেজের প্রতিটি আলাদা আলাদা ক্যাম্পাস হিসেবে কাজ করবে। আর একেক ক্যাম্পাসে পড়ানো হবে একেক বিষয়। সাতটি ক্যাম্পাসকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এগুলো হলো- স্কুল অব সায়েন্সেস, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ এবং স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ থাকলেও প্রতিটি ক্যাম্পাসের জন্য দুজন করে সহকারী প্রক্টর থাকবেন। এদের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী থাকবেন। সার্চ কমিটির সুপারিশক্রমে স্বনামধন্য একজন অধ্যাপককে চার বছর মেয়াদে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া অধ্যাদেশে। এদিকে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে। এর মধ্যে এই অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন কলেজগুলোর শিক্ষকরা। পালন করেছেন বিভিন্ন কর্মসূচি। গতকাল ঢাকা কলেজের সামনে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে মানববন্ধন করে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, সাত কলেজকে গিনিপিগ বানিয়ে কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠন করা যাবে না। শিক্ষকরা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন হবে। একই সঙ্গে কলেজগুলোর স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এ ছাড়া ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ বহু বছর ধরে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করে আসছে। কিন্তু প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা বলেন- সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তারা নন। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আলাদা কোনো স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনোভাবেই বর্তমান কলেজের সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা যাবে না।
গতকাল প্রকাশিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়- রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস ব্যবহার করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যাম্পাস থাকবে সাতটি। বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে বর্তমান তিতুমীর কলেজের নাম হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস। এভাবে অন্য ক্যাম্পাসেরও নামকরণ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য ঠিক থাকবে। শিক্ষার্থীরা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু শিক্ষকরা কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা কেন বলছেন তা জানি না।