জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এবং এডুকো বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি-আগস্ট ২০২৫ অর্থাৎ গত আট মাসে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে ৪৩ জন গণধর্ষণ এবং ২৯ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণের পর ১৫ জন কন্যাশিশু খুন হয়েছে ও পাঁচজন আত্মহত্যা করেছে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জোটের আলোচনায় পাঁচবার উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়নি। এ ঘটনায় মূলত নারী রাজনৈতিক অধিকার পরাজিত হয়েছে। কেউ জয়ী হয়নি। পুরুষতন্ত্র জয়ী হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর পরিচালক নিশাত সুলতানা, অ্যাডভোকেট ফাহমিদা রিংকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর আহসানা জামান এ্যানী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আহসানা জামান এ্যানী বলেন, ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তারপরও ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। আমরা দেখতে পেয়েছি, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে চার মাস থেকে এক বছর বয়সের শিশুদেরও। এর অন্যতম প্রধান কারণ আইন বাস্তবায়নে শিথিলতা।’ তিনি জানান, জানুয়ারি-আগস্ট ২০২৫ সময়কালে অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ৩৪ জন কন্যাশিশু, এর মধ্যে অপহরণের শিকার ১৮ জন কন্যাশিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ১০৪ জন কন্যাশিশু আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। ৮৩ জন কন্যাশিশু খুন হয়েছে। ৫০ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ২০৫ জন কন্যাশিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, ১৯ জন কন্যাশিশু নিজ গৃহে ও স্বামীগৃহে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে সাইবার বুলিং মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। ফেক বা বট আইডির মাধ্যমে কন্যাশিশুসহ নারী শিক্ষার্থী, নারী রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশার নারীদের বুলিং করা হচ্ছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারী ও কন্যাশিশুদের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এখনো তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বাল্যকাল থেকেই নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান হওয়া দরকার। বাল্যকাল থেকেই তাদের জন্য সুযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা দরকার, তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা দরকার। কারণ নারীরা পুষ্টিবান হলে পুরো জাতি পুষ্টিবান হবে, তারা শিক্ষিত হলে পুরো জাতি শিক্ষিত হবে। নারীর অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন হলে পুরো জাতির অবস্থা পরিবর্তিত হবে।’