ভাগ্য বদল আর পরিবারে সচ্ছলতা ফেরানোর আশায় বাড়ি ছেড়েছিলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মমিনুল, মেহেদী এবং শাওন নামে তিন কিশোর। যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। আদম বেপারীর প্রলোভনে অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে আটক হন। প্রায় চার বছর ধরে সেখানকার কারাগারে বন্দি তারা। সন্তানদের ফেরত না পেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্বজনরা।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট বেনাপোল দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় ভুক্তভোগীদের। ভারতীয় পাসপোর্টসহ তিন কিশোরকে দিল্লি এয়ারপোর্ট নিয়ে যায় দালাল চক্র। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তাদের ফেরত পাঠায় কর্তৃপক্ষ। ২৬ অক্টোবর আবারও জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার চেষ্টাকালে ভারতের উত্তর প্রদেশ অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) পুলিশ তাদের আটক করে। সেই থেকে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল পক্ষীমারী এলাকার জয়নাল মিয়ার ছেলে মমিনুল, একই গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান এবং রেজাউল ইসলামের ছেলে শাওন বন্দি ভারতের লক্ষেèৗ কারাগারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ দেখে তিন কিশোরের আটক হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে তাদের পরিবার। মমিনুল ও শাওনের বাবা ধারদেনা করে লক্ষেèৗ কারাগারে সন্তানদের দেখতে গেলেও অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরে আসেন।
এদিকে আদম বেপারী জাহাঙ্গীর আলম ও মামুনের প্রতারণার ঘটনায় সামাজিকভাবে বিচার-সালিশ করেও প্রতিকার মেলেনি। শাওনের বাবা রেজাউল ইসলাম ২০২২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে জাহাঙ্গীর, মামুনসহ চারজনের বিরুদ্ধে জামালপুর আদালতে মামলা করেন। অভিযোগের সত্যতা পান তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার পর অভিযুক্তরা দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যায়।
মেহেদীর বাবা সোনা মিয়া জানান, আমরা গরিব। অনেক চেষ্টা করেও আমাদের সন্তানদের জামিন বা মুক্তি কিছুই করতে পারিনি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তাদের ভারত থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারব না।
শাওনের বাবা রেজাউল করিম জানান, আদম বেপারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যায়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় লোকজনের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, তিন কিশোরের ভারতে পাচার এবং কারাবন্দির বিষয়টি জানতে পেরেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইএমওর মাধ্যমে কীভাবে কিশোরদের দেশে আনা যায়, সে ব্যাপারে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।