ধর্ষণ ও নারী হেনস্তার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর মধ্যরাতে হঠাৎ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল ও ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার করার দাবিতে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন ডিএসডব্লিউ ভবনের (ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর) সামনে জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’-সহ নানা স্লোগান দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। এরপরও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ ওই মামলায় অপরাদীকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতে পাঠায়। আদালত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের মামলায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (বুয়েট) শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘রেডডিট’-এ নিজের পরিচয় গোপন রেখে নারীদের সম্পর্কে অশালীন, অবমাননাকর ও যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্তের বিরুদ্ধে। তিনি নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানান প্রতিবাদরত বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে ওই শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। বহিষ্কারাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এতদ্বারা সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ‘২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায় (আইডি : ২১০৬১৬৯)-এর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো।’
বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীর বুয়েটের ‘ট্রিপল ই- ২১’ ব্যাচ ও আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এদিকে বুয়েটের মামলায় শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর চকবাজার থানার ডিউটি অফিসার এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, বর্তমানে শ্রীশান্ত রায় থানা হেফাজতে রয়েছেন। বুয়েট প্রশাসন তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
কারাগারে শ্রীশান্ত : আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, গতকাল চকবাজার পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ এহসানুল ইসলামের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জামিন শুনানি করেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আগামীকাল (আজ) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী জানান, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা জামিনযোগ্য অপরাধ। অভিযোগটি পুরোটাই ধারণার ভিত্তিতে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলে অবস্থান করে ছদ্মনাম ব্যবহার করে মুসলিম নারী ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে এ বছরের ৮ জুন থেকে ৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ, ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ছদ্মনামের প্রকৃত আসামি শ্রীশান্ত রায়কে শনাক্ত করা হয়। এতে আরও বলা হয়, মুসলিম নারী সংক্রান্ত অশ্লীল মন্তব্য এবং ধর্মীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বুয়েটের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।